করোনাভাইরাসের কারণে বছরের অর্ধেক সময়েরও বেশি কেটেছে স্থবিরতার মধ্য দিয়ে। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে দোকানপাট, অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ পরিবহন সেক্টরও। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানিও। এতে থমকে যায় মানুষের জীবনযাত্রা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠে জনজীবনে। অনেকে বেকার হয়ে পড়ায় রাজধানী ছেড়ে পাড়ি জমান গ্রামে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সেক্টরগুলোর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেন।
এসব কারণে এবছর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আয়কর আদায় নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া, বিগত বছরগুলোতে করদাতারা মেলার মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে যেভাবে কর দেওয়ার সুযোগ পেতেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার আয়কর মেলা না করার সিদ্ধান্তের কারণে করদাতাদের অনেকে আসবেন কি না সেটি নিয়েও কিছুটা সংশয় ছিল। কিন্তু আশার কথা হলো, গত ২৯ নভেম্বর রোববার পর্যন্ত ২ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে এবং সংশয় অনেকটা দূর হয়েছে। গতবছর একইসময়ে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। তবে টিআইএনধারীদের সংখ্যা বাড়ায় পর্যায়ক্রমে কর আদায়ের ব্যপ্তি আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বাংলাদেশের খবরকে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যক্তিখাতের করদাতাদের উৎসাহী করতে এবার করের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি প্রতিটি কর অঞ্চলকে কর আদায়ের জন্য সক্রিয় করে তোলা হয়। পাশাপাশি কর অফিসগুলোতে যাতে মেলার আবহ তৈরি হয় সেই ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। এর ফলে করদাতারা কর প্রদানে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার অনেকেই সময়মতো কর দিতে আসেননি। তবে শেষদিকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ভীড় বেড়ে যায়। একারণে অনেকে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। তবে একমাস সময় বাড়ানোয় গত বছরের তুলনায় এবার সামগ্রিকভাবে কর আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্য বছরগুলোতে যেখানে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ আয়কর প্রদানের বিধান শিথিল করে এবার ৫ শতাংশ কমিয়ে তা নামিয়ে আনা হয় সর্বনিম্ন ৫ এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশে। একইভাবে, কর্পোরেট আয়করও ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া, আগে পুরুষদের ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা হলেই কর প্রদানের বাধ্যবাধকতাও এবার শিথিল করে তা যথাক্রমে ৩ লাখ এবং সাড়ে লাখ করা হয়। অন্যদিকে, এবারই প্রথমবারের মতো আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরম এক পাতা করার পাশাপাশি নিয়মকানুন সহজ করায় অনেকের আগ্রহ বেড়েছে।
তবে এসব সুবিধার পাশাপাশি এবার টিআইএনধারীদেরকে আয়কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দেওয়ায় রিটার্ন আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান আলমগীর হোসেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যক্তিখাতের আয়কর কমার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানান তিনি। তারমতে, করোনা মহামারীতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু যারা চাকরিজীবী তাদের বেতন কমেনি কিংবা চাকরিও যায়নি। আর যারা কর্মহীন হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ এবং এসব মানুষের কেউই কর আওতায় পড়েন না।
তবে, গত বছরের তুলনায় এবছর টিআইএনধারীদের সংখ্যা বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। সেই বিবেচনায় এবছর কর আদায়ের পরিমাণ কিছুটা কম বলে স্বীকার করেন তিনি।