ফাহমিদা জামান
দেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে পুরুষের যতটা ভূমিকা রয়েছে, ততটা ভূমিকা রয়েছে নারীরও। আমাদের দেশের নারীরা শিক্ষাদীক্ষা, মেধা ও মননশীলতায় এগিয়েছে বহুদূর। কর্মক্ষেত্রে এখন যেমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, তেমনি সফলতার সঙ্গে এগিয়েও যাচ্ছে তারা।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু এই সময়ে এসেও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারী। বিবাহিত না অবিবাহিত বিবেচনা করে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া, প্রাপ্য মজুরি নিয়ে অবহেলা, নারী বলে পদমর্যাদা দিতে কার্পণ্য করা, দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে অবহেলা আর অবমাননার শিকার হচ্ছে নারী। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা যেখানে সবার মজুরি যেন সমান হয়- এই নিশ্চয়তা নিয়ে সুপারিশ করে রেখেছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে, সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলস’-এর দেওয়া তথ্য অনুসরণ করলে দেখা যায়, পুরুষ যে পরিমাণ মজুরি পাচ্ছে তার তুলনায় একজন নারী ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে পায় ৭৬ শতাংশ, অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানে পায় ৭১ শতাংশ, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পায় ৬৯ শতাংশ ও কনস্ট্রাকশনে পায় ৬০ শতাংশ মজুরি। শুধু করপোরেট কর্মক্ষেত্রে নয়, প্রান্তিক পর্যায়ে মাঠে কাজ করা নারীরাও হচ্ছে বৈষম্যের শিকার। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, কৃষিকাজে দৈনিক মজুরি হিসেবে একজন পুরুষ শ্রমিক পান ২৯৯ আর একজন নারী পান ২২৬ টাকা। একই পরিস্থিতি ইটভাঁটি, পোশাকশিল্প, নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক পর্যায়ে।
চাকরির বিজ্ঞাপনের অনেক পদেই শুধু পুরুষ প্রার্থী আবেদন করতে পারবে, এমনটি লেখা থাকে। বহির্বিশ্বেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারী। দ্য গেজেটের সূত্র অনুসারে, পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ থেকে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ নারী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন কর্মজীবী নারী সেখানে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
সমাজ নারীদের কাজের স্বীকৃতি দিলেও ঘোচেনি কর্মক্ষেত্রের বৈষম্য। আর এ বৈষম্য নারীদের পিছিয়ে দিচ্ছে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া থেকে। নারীদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবার। কেননা, সমাজের অর্ধেক অংশকে প্রতিকূল বাস্তবতায় রেখে কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না।
লেখক : ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়