করোনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হতে হবে

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মুক্তমত

করোনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হতে হবে

  • গোপাল অধিকারী
  • প্রকাশিত ৭ এপ্রিল, ২০২১

২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে। মৃতের সংখ্যা  ৯ হাজার ১৫৫ জনে। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ জন। ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি এক লাখ ৫৭ হাজার ১৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৭ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৫১ জন। করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধসহ রাত ১০টার পর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতেও বলা হয়েছে। সোমবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু এখনো অনেকাংশে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জনমনে করোনার কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/ অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/ জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ৩. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে। ৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। ৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে। ৬. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ৯. শপিংমলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। ১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৩. করোনায় আক্রান্ত/করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। ১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস; প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। অন্তঃসত্তা/অসুস্থ/ বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যে কোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ১৭. হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ বিরত করতে হবে। ১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা কখনো ক্ষতি করে না। সংকটের সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে ও আশপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায়। সে কারণেই শীতের করোনা প্রভাব ফেলেনি বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পাশাপাশি সেই নির্দেশনাগুলো মনে রাখতে হবে নিজের সুরক্ষার জন্য। পৃথিবীতে যত বিখ্যাত মানুষ ছিলেন সবাই দায়িত্বশীল ছিলেন। দায়িত্বশীলতার গুণে তারা আলোকিত। যেকোনো বিষয়ে পূর্বঅভিজ্ঞতা বা সতর্কতা ও পূর্বপ্রস্তুতি বিপর্যয় কমিয়ে দেয়। সেই আলোকে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করবে বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ যেখানে বিশ্বের ৩৬টি দেশ এখনো টিকা পায়নি, সেখানে বাংলাদেশে করোনার টিকা নিয়েছে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। তারপরও আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাস্তবায়নকারী সবাইকে অর্থাৎ জনগণের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে। কারণ সরকারের একার পক্ষে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। করোনা নিয়ন্ত্রণ সরকারের একার দায়িত্বও নয়। কথায় বলে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় একটাই, আর তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা খুব বেশি জরুরি এবং সেটা অবশ্যই সঠিক নিয়মে হতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন, বাস্তবায়নে বাধ্য করুন। করোনামুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হোন।

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

 

 

gopalodikari1213@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads