আগামী চার বছরে ৪০ হাজার টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আর এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর।
সূত্র বলছে, বর্তমানে বারি মাল্টা-১ জাতের ফলটি দেশের প্রায় সব এলাকাতেই ভালো ফলন দিচ্ছে। কমলা চাষ করেও আলোর মুখ দেখছেন কৃষকেরা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশের ৩০ জেলায় মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা চলতি বছরেই ছড়িয়ে পড়বে মাঠ পর্যায়ে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের সাত বিভাগের ৩০টি জেলার ১২৩ উপজেলায় আধুনিক পদ্ধতিতে কমলা ও মাল্টা চাষ করা হবে।
সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট (লেবু জাতীয় ফল) ও কমলা উন্নয়নের আওতায় ৩০টি জেলায় পাঁচ হাজার বাগানের মাধ্যমে কমলা ও মাল্টা চাষ করা হবে।
পরিপক্ব সবুজ রঙের বারি মাল্টা-১ এর উচ্চ ফলন ও স্বাদের কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই ফল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই প্রাথমিকভাবে সবুজ মাল্টা উৎপাদনে বেশি নজর দেওয়া হবে। কৃষক পর্যায়ে এই জাতের মাল্টা চারা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেবে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ শাখার উপ-প্রধান দীপক কুমার সরকার বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেখেছি বারি মাল্টা-১ দেশের প্রায় সব এলাকাতেই ভালো ফলন দিতে পারে। এ ধরনের ফলের স্বাদের জন্য মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ৩০টি জেলায় সবুজ মাল্টা উৎপাদনে নজর দেওয়ার পাশাপাশি কমলা, বাতাবি লেবুও (জাম্বুরা) উৎপাদন করা হবে। এজন্য কৃষক পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী এ কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই কর্মকর্তা বলেন, আগামী চার বছরে ৪০ হাজার টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।
প্রথম দিকে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সিলেট ও মৌলভীবাজারে চাষ হবে মাল্টা ও কমলা।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাট, বান্দরবান, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রামে উৎপাদন করা হবে কমলা ও মাল্টা।
সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ কোটি টাকার কমলা ও মাল্টা দেশে উৎপাদিত হয়েছে। অথচ একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৯০ কোটি টাকার এর ফল আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলার আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য উপযোগী নয়। তবে বৃষ্টিবহুল আদ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে লেবু জাতীয় ফল ভালো জন্মে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে কমলা চাষ হয়ে আসছে।
বর্তমানে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় কমলা এবং মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। তবে আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এসব ফলে রোগবালাই বেশি হয়।
তাই লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসব মাল্টা ও কমলা উৎপাদন করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাল্টা ও কমলা উৎপাদনে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রয়োজনে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হবে। প্রকল্প এলাকায় ২০টি সরকারি নার্সারিতে মাল্টা ও কমলার মাতৃবাগান স্থাপনের পাশাপাশি চারা উৎপাদনের ব্যবস্থাও থাকবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহবুবুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়নের ফলে বিদেশ থেকে মাল্টা ও কমলা আমদানি একেবারে কমে আসবে বলে আশা করছি।