**
মাহফুজ রিপন
মৃত্যুফুল
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজলে
তুমি সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে দাঁড়াবে
আমি যেন দূর থেকে ছায়া দেখতে পাই।
চিলেকোঠার ফুলের বাগান থেকে
যে রক্ত গোলাপ তুমি উপহার দিয়েছিলে
আজো সে ফুল জমা রয়েছে পৃষ্ঠার ভাঁজে।
যদি মৃত্যু আসে; আমি নিরব হয়ে যাই
খুকি আমাকে নিয়ে যাবে গ্রামের বাড়িতে
তুমি শুধু সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে দাঁড়াবে।
অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলছে; আমি স্পষ্ট দেখছি
বাবার কবরের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাকে; আর
তোমার টবের ফুলগুলো শবযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে।
**
সুবীর সরকার
জার্নাল
সেই যে গিটার বাজাতে বাজাতে চলে
গেলে!
অনন্ত মহিষ দিয়ে ভরে ওঠা এই
মাঠনদীপরিধি
নলেন গুড়ের দেশে আমাদের হাসি উড়ে
যায়
তোমাকে খুব খুঁজতে থাকি
তোমাকে গোপন চোখে দেখি
তান্ত্রিকের তাঁবুর ভেতর হারমোনিয়াম
বড় বন্যার পাশে বসে পড়ি
তোমার জন্য রেখে দিই মেঘলা রঙের
টুপি
**
বঙ্গ রাখাল
ধুলোবুক
দুদিন দাঁড়িয়ে অবশেষে অসহায় হয়ে
যে মানুষ ফিরে যায় ঘরে
তারও কি অভাব ছিল
বুকের মধ্যে বিকট অন্ধতা ঘিরে ছিল মাথার মগজ
মেহগনি গাছে, জোনাক জ্বলা রাতে যে পাখি
কদমের ডালে, ডেকে বলে কানে কানে
সুদূরে প্রিয়তি তার গুমরে মরে ঘরে
জীবনের কোলাহলে মিশে যাবে একদিন
ধুলো বুকে লিখে রাখা যত সব নাম।
**
হানিফ রাশেদীন
প্রতীক্ষার রাত
কেউ একজন সুপ্ত আগুন উসকে দিক
ভেঙে ফেলুক অন্ধকার সীমান্ত
প্রাণের প্রদীপ হাতে এগিয়ে আসুক
খুলে দিক প্রতিটি ঘরের নিস্তব্ধ জানালা
শোনাক নির্ভেজাল প্রেমের গল্প
একজন উড়িয়ে দিক অন্তত একটি প্রজাপতি
চারপাশের বিরুদ্ধ বাতাস থামিয়ে দিক
কেউ একজন ছড়িয়ে দিক হূদয়-বাসনা
উচ্চ কণ্ঠে বলুক চাঁদের ঠিকানা
কেউ আবাদ করুক বসন্তের রঙ
**
মিজান মনির
জলফড়িংয়ের উল্লাস
তোমার স্বপ্নের ভূমি, গাঢ়-উজ্জ্বল লাল-সবুজ
বর্ণহীন কণ্ঠস্বরের আহ্বানে, সম্ভ্রম-রক্ত বিনিময়ে
গড়ে ওঠা আটষট্টি হাজার অসাম্প্রদায়িক গ্রাম...
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া— খুঁজে ফিরি তোমার হারানো অতীত।
রূপসা থেকে পাথুরিয়া— কানে বাজে আকাশছোঁয়া অগ্নিকণ্ঠ,
এ মাটির গন্ধ বুকে নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে;
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম, সবখানেই আজ
সম্ভাবনাময় বীজ— সোনা ফলে...
ধ্বনি-প্রতিধ্বনি সর্বত্র স্বাধীন, স্বাধীন
আপন আলয়ে জলফড়িংয়ের উল্লাস...
পেয়েছি স্বাধীনতা সার্বজনীন।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে উড়ন্ত নিশান
তোমার অবয়ব যেদিকে আমি তাকাই
জয়ধ্বনিতে এক পা- দু’পা— চার-পা বাড়ায়।
**
নাজিম খোকন
নক্ষত্রচোখ
বাতাস উড়ে হিম হবে বাতাসের গায়ে
আকাশে নক্ষত্রেরা
ম্লান হবে কুয়াশায়
একজন ছাদের কার্নিশে বসে দোল খাবে
পূর্ণিমা প্রত্যাশায়
দূরবীণ লাগিয়ে এক যুবক
প্রজাপতির রঙ দেখে দেখে
মাতাল হবে অথবা পাগল
ঐখানে মেঘ বৃষ্টি ঝরাবে
নক্ষত্রের চোখ থেকে।