কাজী সিকান্দার
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন সুন্দর একটি পৃথিবী। যেখানে আমরা বসবাস করি। এ পৃথিবীর বুকে আমাদের জন্ম। এ পৃথিবীতেই আমাদের কবর রচিত হয়। যুগে যুগে এ পৃথিবীতে এসেছে অসংখ্য অগণিত নবী, রাসুল ও মহামানব। তাঁরা কেই বেঁচে নেই। বর্তমানে যারা আছেন তাঁরাও একদিন এ মাটির তলে চলে যাবেন। মধ্যখানে এ স্বল্প সময় শুধু আল্লাহতায়ালার ইবাদতের জন্য। আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্য। আল্লাহর কুদরতি পায়ে মাথা ঠেকানোর জন্য। মানুষের কপালের বড় দাম। কারণ এ কপাল আল্লাহর জন্য। মানুষের সময় ও কাজের বড় দাম। তাই এ সময় ও কাজ হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। অন্য কারো সামনে মাথা ঝুঁকানোতো প্রশ্নই আসে না। অন্য কারো উদ্দেশ্যেও যেন না হয় কোনো কাজ ও সময় ব্যয়। এখানে যুগে যুগে মানুষ ভুল করেছে। মানুষ মানুষের সবচেয়ে বড় দামি কপাল ঠেকিয়েছে মানুষের পায়ে। কবরের কাছে। মানুষ তার সবচেয়ে দামি সময় ব্যয় করছে কবরের ওপর প্রদীপ জ্বালানো থেকে কবরকে সাজানোর কাজে। কথা ছিল মানুষ নিজে সাজবে আল্লাহর রঙে। কিন্তু মানুষ সাজায় কবর। এ চরম ভুল যেন উম্মত না করে। এ শিরকের পথে যেন উম্মত না হাঁটে। তাই রাসুল (সা.) বড় আশঙ্কা নিয়ে উম্মতকে সতর্ক করছেন।
রাসুল সাল্ল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ইয়াহুদি এবং খ্রিষ্টানদের ওপর আল্লাহর লা’নত হোক। তারা স্বীয় নবীগণের কবরকে সিজদার স্থানরূপে গ্রহণ করেছে। (বুখারি ও মুসলিম) রাসুল (সা.) দেখলেন তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে। তাই তার উম্মতকে বলে যাচ্ছেন যেন তাঁর কবরকে সিজদার স্থান না বানাতে। কারণ এ সিজদা করা শিরক। সিজদা শুধু আল্লাহর জন্য। কোনো নবী বা আল্লাহর ওলীর জন্য নয়। হজরত জুন্দুব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ স্বীয় নবীগণ এবং সৎলোকগণের কবরকে সিজদাগাহ বানিয়েছিল। খবরদার! তোমরা কবরকে সিজদাগাহ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি। (মুসলিম) এর থেকে স্পষ্ট কথা আর কী হতে পারে? এরপরও বড় হতভাগ্য আমরা। আমাদের যুগে এসে সেই নবীর উম্মতই কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। যে নবী বলেছেন, ‘খবরদার! তোমরা কবরকে সিজদাগাহ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি’।
কবরে প্রদীপ জ্বালানো : কবর একটি মৃত মানুষের শেষ ঠিকানা। কবরে যে শায়িত আছে তিনি হয়তো সুখে আছেন অথবা দুঃখে। সব শক্তি শেষ হওয়ার পর একজন মনুষের কবরে স্থান হয়। যেখানে তার নিজের ব্যাপারে কোনো শক্তি রাখেন না, সেখানে অন্যের কী উপকার করবে? কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কবর সাজানো, কাবরে প্রদীপ জ্বালানো থেকে শুরু করে কবরকেন্দ্রিক ওরশসহ অনেক অনুষ্ঠান করা হয়। এখানে দুশ্রেণির মানুষ কাজ করে। একশ্রেণির মানুষ বিশ্বাস করে এ কবরের কোনো কিছুই নেই, তবে তার অর্থনৈতিক স্বার্থে কবরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। কারণ, মানুষ এতে দান -সদকা করে, মানত করে তাই তাদের একটি উপার্জনের মাধ্যম হলো। তাই তারা মানুষকে বিভিন্ন কিচ্ছা-কাহিনি বর্ণনা করে মাজার ও কবরের মহত্ত্ব তুলে ধরে। দ্বিতীয় শ্রেণির লোক, তারা বিশ্বাস করে কবরের অনেক ক্ষমতা। মূলত তাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তাই তারা এসে প্রদীপ জ্বালায়।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) কবর জিয়ারতকারীণি মহিলাদেরকে লা’নত করেছেন এবং সেই সব লোকের ওপরও লা’নত করেছেন যারা কবরকে মসজিদ বানিয়েছে এবং সেখানে প্রদীপ জ্বালায়। (আবু দাউদ, তিরমিযি, মিশকাত-হা/৭১) কবরের ওপর প্রদীপ জ্বালানো লানতের কাজ। মহিলা কবর জিয়ারত করা লা’নতের কাজ। কিন্তু বর্তমানে মাজারগুলোতে মহিলাদের আগমন এত বেশি তা কল্পনাতীত। অরো বড় বিস্ময়ের কথা তারা কবরের সামনে সিজদা ও বিভিন্ন মান্নত করে বিভিন্ন জিনিস চায়। এসব কাজ সম্পূর্ণ হারাম ও শিরক।
কবরের উপর নির্মাণ করা : কোনো কবরের উপর ঘর বা কিছু নির্মাণ করা বৈধ নয়। কবরকে এক বিঘহাত উঁচু করা যাবে এর উপর করা যাবে না। কবরের উপর পাকা করা যাবে না। তবে কবরের সামনে বা পিছনে পরিচিতির জন্য কোনো নিশানা দেওয়া যেতে পারে। কবরের উপর বসাও ঠিক নয়। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (রা.) কবর পাকা করা, কবরের উপর বসা এবং এর উপর কোনো কিছু নির্মাণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, মেশকাত -হা/১৪৮) এখানেও আল্লাহর রাসুল (সা.) কবরের উপর বসা, কবরের উপর নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছেন। কবরের উপর পাকা করাসহ এ কাজগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমানে একাজগুলোই হচ্ছে বেশি। আরো দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। একাজগুলোর পেছনে প্রতাপশালী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত থাকায় তাদের গতি তীব্রতার সাথে বাড়ছে। যে কাজ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সেই কাজই করছে তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে। সম্মানের দোহাই দিয়ে। এ কাজগুলো থেকে উত্তরণের পথ আমাদেরকে বের করতে হবে। না হয় এক সময় পুরো পৃথিবী শিরকে ভরে যাবে। আসুন আমরা এ সব শিরক কাজ থেকে বিরত থাকি।
মুফতি কাজী সিকান্দার
পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা