কচুয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী, স্বস্তিতে জাতীয় পার্টি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নির্বাচন

নির্বাচনী হাওয়ায় চাঁদপুর-১

কচুয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী, স্বস্তিতে জাতীয় পার্টি

  • মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর, ২০১৮

ঘোড়গার বিলের ‘কৈ’ মাছে প্রসিদ্ধ ও কুল (বড়ই) অধ্যুষিত উপজেলা হিসেবে পরিচিত কচুয়া। চাঁদপুর-১ কচুয়া, নির্বাচনী ২৬০ এলাকায় নির্বাচনী আমেজ বইছে। এ আসনটি ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭শ’ ২৩ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩৯জন ও মহিলা ভোটার ১লক্ষ ৩১ হাজার ৫৫জন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মন জয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও। অনেকে গণসংযোগের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি পোষ্টার লিফলেট ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে চালাচ্ছেন প্রচারণা।

নির্বাচনের দিনক্ষণ যতো ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের মাঝে চলছে নানান হিসাব নিকাশ। কচুয়ায় জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতিটি সময় উত্তর দক্ষিণ আঞ্চলিকতার সুর উঠে। আগামী নির্বাচনেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বড় দু’দলে কচুয়া দক্ষিণে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তন্মধ্যে উত্তরে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মোঃ এমদাদুল হক রুমন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে ১৯৭০ এর নির্বাচনে আলহাজ্ব সেকান্দর আলী এমপিএ নির্বাচিত হন, ১৯৭৩ সালে আওয়ামীলীগ থেকে খন্দকার অ্যাড. আব্দুল আউয়াল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৭৯ সালে মোঃ আলফাজ উদ্দিন বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র থেকে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে মরহুম রফিকুল ইসলাম রনি, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শাসনামলে অধ্যাপক ডাঃ শহীদুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৯১ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মরহুম মিসবাহ উদ্দীন খান সংসদ সদস্য, ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে অল্প কয়েক দিনের জন্য অধ্যক্ষ আবুল হাসানাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে আ ন ম এহসানুল হক মিলন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি ও পরবর্তী ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আগামী নির্বাচন কেমন হবে, কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পাবেন, তা এখনো নির্ধারিত না হলেও এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে নানা কৌতুহল। বিশেষ করে বড় দু-দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে পছন্দের প্রার্থীর তালিকা নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। কচুয়ায় মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব মোঃ গোলাম হোসেন মাঠে আসায় আওয়ামীলীগে ও এহসানুল হক মিলনের বিকল্প হিসেবে দু’জন প্রার্থী মাঠে প্রচারণা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে স্বস্তিতে জাতীয় পার্টির নেতা এমদাদুল হক রুমন বিভিন্ন সময় প্রচারণা গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

এ আসনের বর্তমান সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনোক্রেট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০৮ ও পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কচুয়ার উন্নয়নের নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বিশেষ করে অবহেলিত কচুয়ার প্রতিটি প্রান্তে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। যার কারণে আগামী ১’শ বছরেও তাঁর অবদানের কথা কচুয়াবাসী স্বচিত্তে স্মরণ রাখবে বলেও মনে করেন তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা । এই উন্নয়ন ধরে রাখার স্বার্থে আবারো ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপিকে প্রার্থী হিসেবে পেতে আগ্রহী তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিন নির্বাচনী এলাকায় ছুটে আসছেন। যোগ দিচ্ছেন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও সভা সমাবেশে, করছেন উঠান বৈঠকও।

এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী বলেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি অবহেলিত কচুয়াকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করেছেন। আমার বিশ্বাস আগামীতে তিনিই আবারো নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন এনবিআরে’র সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব আলহাজ্ব মোঃ গোলাম হোসেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে আনুষ্ঠানিক যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। পাশাপাশি এলাকায় মহিলা কলেজ, হাসপাতালসহ বেশ কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

বিশেষ করে নিজ এলাকায় প্রতি সপ্তাহে নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ ও সভা সমাবেশ, কর্মীসভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবেও তিনি গ্রীন সিগনালে রয়েছেন বলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনিই আওয়ামীলীগের একক মনোনয়ন পাবে বলে তার সমর্থকরা দাবী করছেন। এ ব্যাপারে তাঁর হিতৈষী আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান হাতেম বলেন, জনগণ, তৃণমূল ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আলহাজ্ব গোলাম হোসেনকে নৌকার মনোনয়ন দিবেন বলে আমি আশাবাদী। তবে জনগণ ও নেতাকর্মীদের চাহিদার ভিত্তিতে গোলাম হোসেনকে মনোনয়ন দিলেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত সম্ভব।

আওয়ামী লীগ হতে মনোনয়নের বেপারে গোলাম হোসেন জানান, রাজনীতি হচ্ছে সব মানুষের সেবা করার সর্বোচ্চ মাধ্যম। এলাকায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছি। তার পরও কাজ করে যাব। বিচার করবে জনগন।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলন বেশ কিছু মামলার আসামী হয়ে, দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছেন ।

বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহসানুল হক মিলনের বিকল্প নেই। অন্যদিকে দলের দুর্দিনে এহসানুল হক মিলনের অনুপস্থিতিতে মালয়েশিয়া শাখা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ মোশাররফ হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের সার্বিক খোঁজ খবর ও মনোনয়ন প্রত্যাশায় পোষ্টার লিফলেট বিতরণ করে প্রচার- প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মোশাররফ হোসেন তারেক রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। র্দুদিনে তৃনমূল নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখায় তিনি ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকরা মনে করেন।
এছাড়াও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হুমায়ুন কবির প্রধান ও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। এছাড়া উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি, প্রকৌশলী আহম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রচার প্রচারণা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মজুমদারও এ তালিকায় রয়েছেন। মনোনয়নের তালিকায় প্রকৌশলী আহম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক ও মোঃ মোশাররফ হোসেনও এগিয়ে রয়েছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কচুয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক মোঃ এমদাদুল হক রুমন ও কেন্দ্রীয় যুব সংহতির সদস্য ও ফ্রান্স শাখা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক হাবিব খান ইসমাইলও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি মিজানুর রহমান খাঁন বলেন, কচুয়ায় ৯০এর পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান অনেকটা শক্তিশালী থাকলেও মাঝ পথে তা ঝিমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর পর থেকে এমদাদুল হক রুমন কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন, উপজেলা যুবসংহতি, ছাত্র সমাজ ও অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন, কমিটি গঠন ও ১১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১শ’ ৫টি কমিটি সম্পন্ন করেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী এমদাদুল হক রুমন জানান, চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনের মধ্যে কুচয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি মাঠে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আ’লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বৈরিতা ও অসহিষ্ণুতা ভোটারদের জাতীয় পার্টির প্রতি আকৃষ্ট করছে। ফলে বেড়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। তিন’শ আসনে নির্বাচন ছাড়া যদি জাতীয় পার্টি জোটগত নির্বাচন করে, তবে অবশ্যই চাঁদপুর-১ তথা কচুয়া আসনটি জাতীয় পার্টি নির্ধিদ্বায় চাইতে পারে।

অপরদিকে ১৪ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী জাসদ (ইনু) কচুয়া শাখার সভাপতি মোঃ আবদুল হাই’ও এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি কচুয়াবাসির দোয়া চেয়ে এলাকায় ব্যানার ও পোস্টার ছাটিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads