কক্সবাজারের বিপর্যস্ত ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্প

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

কক্সবাজারের বিপর্যস্ত ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্প

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল, ২০২০

করোনার প্রভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খামারীরা। তাদের উৎপাদিত মুরগী,ডিম এবং দুধ বিক্রি করতে না পেরায় খামারেই নষ্ট হচ্ছে উৎপাদিত পন্য। এতে চরম আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার খামারীরা। খামার লোকসানে থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে জেলার এই শিল্পে সাথে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। এছাড়া সরকারি আদেশ থাকা সত্বেও অনেক সময় মুরগী দুধ পরিবহণে আইনশৃংখলা বাহিনি বাধা দেওয়ায় চাহিদা থাকলেও পৌছে দেওয়া যাচ্ছেনা বিভিন্ন দোকানে। তাই এই বিশেষ মূহুর্তে ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে প্রণোদনা সহ আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন খামার মালিকরা।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে,কক্সবাজারে ছোট বড় মিলিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খামার আছে ৯৬৭, লেয়ার ৩৭৮, সোনালী মুরগীর খামার ৭০, হাঁস ৫৪, টার্কি ৪৫,কোয়েল ৫, কবুতর ১৫৯। ডেইরি খামার(দুগ্ধ খামার) ৯৪২, ছাগল ২৮৮, ভেড়া ১৩৯, গরু মোটাতাজা করণ খামার ৫১৮ সে হিসাবে জেলায় মোট ছোট বড় খামার আছে ৩ হাজার ৫৬৫ টি। এতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী জড়িত বলে জানা গেছে।

কিছুদিন আগেও জেলার সব গুলো খামারবেশ আয় বর্ধক থাকলেও বর্তমানে চরম আর্থিক বিপর্যস্থ সময় কাটাচ্ছে জেলার খামারীরা। এ ব্যপারে জানতে চায়লে টেকপাড়া এলাকর ক্ষুদ্র খামারী আরাফাত বলেন, আমাদের বাড়িতে বর্তমানে ২ টি গাভী দুধ দেয়। করোনা পরিস্থিতির আগে দোকান থেকে আমাদের ফোন নিয়ে বিরক্ত করবো দুধের জন্য এখন আমার দোকানে নিয়ে গেলেও নিতে চায়না কারন গ্রাহক কমে গেছে আর বেশির ভাগ দোকানও বন্ধ তাই দুধ নিয়ে কি করবো তাই আগের দামের চেয়ে কম দাদের কাছের বাসাবাড়িতে দুধ বিক্রি করছি নিজেরা গিয়ে এতে প্রতিদিন অন্তত ১২০০ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

বিজিবি ক্যাম্প এলাকার রমজান বলেন, আমার ছোট ডেইরী খামার আছে বর্তমানে গাভী থেকে দুধ নিয়ে সেটা বাজারে বিক্রি করতে পারছিনা। আর ছোট স্কুটি নিয়ে দোকানে বিক্রি করতে গেলেও রাস্তায় পুলিশ বাধা দেয় আবার কিছু টাকা চায়। এখন সারা দিন ঘুরেও সব দুধ বিক্রি করতে পারিনা ফলে দৈনিক ৪/৫ হাজারটাকার লোকসান হচ্ছে জানিনা এই ক্ষতি কিভাবে পুষাবো।

পিএমখালী পাতলী এলাকার ব্রয়লার মুরগী খামারী মোহাম্মদ রফিক বলেন, আমার ১ হাজার মুরগীর খামারআছে। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে কালবৈশালী ঝড়ে আমার খামারের চাল উড়ে গেছেএতে আমার মুরগীর ঠান্ডা জনিত সমস্যা হয়েছে। তার পরও অনেক কষ্ট করে মুরগী কিছু বড় করেছি কিন্তু বাজার দর নেই। আগে খামার দর ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা এখন ৭০/৭৫ টাকা চায়। কিভাবে বিক্রি করে পুষাবো আপনারাই বলেন এতে আমার অন্তত ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে নিশ্চিত। তাই সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তার দাবী জানান তিনি।

ঘোনারপাড়া এলাকা কানন বিশ্বাষ বলেন, আমি খামার থেকে মুরগী কিনে বাজারের দোকানে বিক্রি করি। সে জন্য আমরা মাঠে প্রায় ২০ লাখ টাকা পুজি খাটিয়েছি এবং ২০ জন কর্মচারী আছে তবে খামার থেকে মুরগীর গাড়ি আসতে রাস্তায় বাধা দেয় পুলিশ গতকাল খুরুশকুল ব্রীজের পাশে বাধা দিয়েছে পরে ৩০০ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়। এর আগে লিংক রোড়েও ২০০ টাকা দিলে পারহতে দিয়েছে। আর হোটেল মোটেল জোন বন্ধ থাকায় মুরগীর চাহিদা কমে গেছে তাই মরগীর দাম বেশি কম এখন খামার রেইট ৮০ টাকা। এতে খামারীরা ব্যাপক লুটসানে পড়েছে আর আমরা বিক্রি না থাকায় বিপুলটাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। তিনি জেলা প্রশাসন থেকে মুরগী ডিম এবং দুধ বিক্রেতাদের একটি পাসকার্ডের ব্যবস্থা করার দাবী জানান।

রামুর নাছির নামের খামারী বলেন, আমার খামারে দৈনিক প্রায় ১৭০০ ডিম উৎপাদন হয়। আগে দোকানদাররাই এসে ডিম নিয়ে যেত এখন বেশির ভাগ দোকান এবং বাজার বন্ধ থাকায় ডিমের চাহিদা কমে গেছে ফলে আমি ব্যাপক লোকশানে পড়েছি কারন আমার প্রতি পিচ ডিমের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৬ টাকার বেশি এখন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকার কমে তাহলে আমার কাছ থেকে ৫ টাকায় কিনতে চায়ছে এখন ডিম বিক্রি না করে জমিয়ে রাখার উপায় নায়। আবার মুরগীর খাদ্য কিনতে হচ্ছে মোট কথা সব দিক মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকা লোকশান হবে। তাই সরকারি ভাবেআমাদের প্রণোদনা দেওয়া দাবী জানাচ্ছি।

দিকে টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া থেকে অনেক ডেইরী এবং পোল্ট্রি খামারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে জেলায় খামারীদের অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি হবে। সব কিছুতে বিপর্যয় নেমে এসেছে তাই সরকারি ভাবে এই শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে প্রণোদনা দেওয়ার দাবী জানান তারা।

এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ অসীম বরণ জানান,দুধ ডিম,মুরগী এগুলো খাদ্য এবং পচণশীল দ্রব্য তাই এগুলো পরিবহণ এবং বিপনণের জন্য সরকারি ভাবে প্রজ্ঞাপন আছে তবুও বার বার শুনতে পাচ্ছি পথে দুধ.মুরগী,ডিম পরিবহণের গাড়ীকে বাধা দেওয়া হচ্ছে এতে খামারীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অন্যদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ওয়াহিদুল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে সারা দেশে সব ধরণের খামারীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এটা সত্য। তাই তাদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি ইতি মধ্যে আমাদের মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় নিজেই আলাপ আলোচনা করছে যেহেতু এটা জাতীয় বিষয় তাই যে কোন সিন্ধান্ত আসলেই সেটা আমরা দ্রুত কার্যকর করবো।

এ সময় তিনি দুধ,ডিম,মুরগী বাহি কোন গাড়ীর গতিরোধ না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads