এবার আসছে ইন্টেলিজেন্ট প্রিপেইড গ্যাসমিটার

প্রতীকী ছবি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

এবার আসছে ইন্টেলিজেন্ট প্রিপেইড গ্যাসমিটার

শনাক্ত করবে ছিদ্র, বছরে সাশ্রয় ৫৬৭ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি, ২০২১

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় প্রায়ই গ্যাস থাকে না। আর থাকলেও চাপ এত কম থাকে যে ঠিকমতো রান্না করা যায় না, এমন অভিযোগ বহু বছরের। গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গ্যাস না থাকলেও প্রতি মাসেই বিল দিতে হচ্ছে। এই গ্যাস সংকট শীত এলে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। কবে এ সমস্যার সমাধান হবে বা আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের এ সংশয় দূর করতে এবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) ইন্টেলিজেন্ট প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তিতাসের দাবি, শীতে গ্যাস লাইনে এক ধরনের আর্দ্রতা জমে। ফলে গ্যাসের চাপ অন্য সময়ের তুলনায় কমে যায়। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় গ্যাস সংকটের কারণ হিসেবে বিতরণ লাইনেই অজস্র ছিদ্রকে দায়ী করছে তিতাস।  তাই এবার পুরো নেটওয়ার্কে গ্যাস বিতরণ পাইপলাইনের অজস্র ছিদ্র চিহ্নিত করার প্রযুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হলে আর অনুমাননির্ভর ও বিক্ষিপ্তভাবে মাটি খুঁড়ে ছিদ্র চিহ্নিত করতে হবে না। কাজটি অনেক সহজ ও নির্ভরযোগ্য হবে।

জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশে যে পরিমাণ গ্যাস বিতরণ করা হয়, তার প্রায় ৭০ শতাংশই তিতাসের। তাদের সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পাইপলাইন। ঢাকা মহানগরীসহ তিতাসের বিশাল বিতরণ এলাকায় গ্রাহকের আঙিনা পর্যন্ত জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে এসব লাইন। কোনো কোনো এলাকায় স্থাপিত লাইনের বয়স প্রায় ৬০ বছর। প্রাকৃতিক কারণে এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজের সময় অসংখ্য লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। এ ছাড়া কোনো কোনো এলাকায় পাইপলাইনের যে নকশা রয়েছে, সে অনুযায়ী লাইন খুঁজেই পাওয়া যায় না। তাই ছিদ্রান্বেষণের পাশাপাশি ডিজিটাল ম্যাপিং করাও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে ছিদ্র অন্বেষণের জন্য অনুমাননির্ভর মাটি খনন, পাইপলাইনের কাছে পানিতে দৃশ্যমান বুদবুদ প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথেন গ্যাস ডিটেক্টর মেশিনও ব্যবহার করা হয়। যদিও এ ধরনের মেশিন আমাদের কাছে বেশি নেই। এর কার্যকারিতাও শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার মতো নয়। তাই আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। 

ছিদ্রান্বেষণ পদ্ধতি আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) শিগগিরই ১০টি উন্নত মানের গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন দিচ্ছে। জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের জন্য একই ধরনের আরো ১২টি মেশিন কেনা হচ্ছে। এরপর গ্রাহকের আঙিনায় ইন্টেলিজেন্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে, যা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত পাইপলাইনের ছিদ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করবে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এমন একটি গাড়ির (প্রাইভেট কার) কার্যক্রম সরেজমিনে পরীক্ষা করা হবে। এ গাড়িটি রাস্তা দিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পাইপলাইনের ছিদ্র চিহ্নিত করবে। জাইকার সহযোগিতায় স্মল ওয়ার্ল্ড অ্যাপভিত্তিক ছিদ্র শনাক্তকরণ এবং লাইন ডিটেকশন ও ডিজিটাল ম্যাপিং ঢাকার মিরপুর ও বনানী এলাকায় পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানান তিতাসের।

তিতাসের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের বিতরণ নেটওয়ার্ক থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৪৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উধাও হয়ে যাচ্ছে (এই হিসাব গত ৫ বছরের)। এক বছরে যে পরিমাণ গ্যাস উধাও হয়ে যায়, তা দিয়ে তাদের বিতরণ নেটওয়ার্কভুক্ত তিনটি সার কারখানা ২ বছর চালানো যায়। আর গত ৫ বছরে যে গ্যাস উধাও হয়ে গেছে, তা দিয়ে তিতাসের নেটওয়ার্কভুক্ত ১৭টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এক বছর পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো যেত।

বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় (ওয়েটেড অ্যাভারেজ) দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে বছর উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৫৬৭ কোটি টাকা। উধাও হয়ে যাওয়া এই গ্যাস সিস্টেম লসের হিসাবে যুক্ত করা হয়। তবে উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ বা সিস্টেম লস প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা তাদের ২৭ লাখেরও বেশি মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের অব্যবহূত গ্যাস আসলে কোম্পানির সিস্টেম গেইন। সেটা হিসাবে না ধরেই উপরোক্ত সিস্টেম লস বা উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের মতে, পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস উড়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য লাইন প্রতিস্থাপন, প্রিপেইড মিটার এবং ইভিসি মিটার স্থাপনের মতো কাজগুলো সম্পন্ন না হলে প্রকৃত সিস্টেম লস এবং অপচয়ের সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হবে না। তাই এই কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। আগামী তিন বছরের মধ্যে যাতে এই কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। ঢাকা মহানগরী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলাজুড়ে তিতাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বর্তমানে তিতাসের দৈনিক চাহিদা ২২০ কোটি ঘনমিটার। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় তিতাস ১৮০ কোটি ঘনমিটারের বেশি পায় না। বর্তমানে সারা দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বেশি অংশেরই জোগান হয় উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। অবশিষ্ট অংশের জোগান হয় আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads