এপ্রিলেই শেষ হচ্ছে জাতীয় ডাটা সেন্টারের নির্মাণকাজ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি পরিদর্শনকালে নারী কর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এপ্রিলেই শেষ হচ্ছে জাতীয় ডাটা সেন্টারের নির্মাণকাজ

  • শাহাদাত হোসেন
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে নির্মাণাধীন জাতীয় ডাটা সেন্টারের ৯৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ফোর টিয়ার ডাটা সেন্টারটি। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যক্রম চলছে। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম এ ডাটা সেন্টারের নির্মাণকাজ চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বুধবার বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

প্রায় সাত একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ডাটা সেন্টারটি। ডাটা সেন্টারের নির্মাণকাজে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিই। ডাটা সেন্টারের দুই লাখ বর্গফুটের মূল ভবনে ইতোমধ্যেই সকল সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাও সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। এ ছাড়া ডাটা সেন্টারের সুরক্ষায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে থ্রি-টিয়ার ডাটা সেন্টার থাকলেও সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ডাটা সেন্টারটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।

ডাটা সেন্টারটি চালু হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সব তথ্য এক জায়গায় রাখার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে সকল নাগরিকের কাছে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

ডাটা সেন্টারটি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে নির্মাণাধীন অন্যান্য স্থাপনাও ঘুরে দেখেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।

প্রথম পর্যায়ে সেখানে নয়টি কোম্পানিকে ২০ দশমিক ৫ একর ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো নয়টি কোম্পানিকে ২৮ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদে এখানে জমি বরাদ্দ পেয়েছে রবি অজিয়াটা, জেনেক্স, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, ডাটা সফট, এসবি টেল, সিস্টেক ডিজিটালসহ আরো কিছু কোম্পানি। ইতোমধ্যেই কিছু প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান হাই-টেক সিটিতে বিনিয়োগ করবে প্রায় ৩২০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। হাই-টেক সিটিতে স্থাপিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভ ফর জবস’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে দুটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৪০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে। ডেভেলপার কোম্পানি সামিট টেকনোপলিস বিডি কর্তৃক ৬০ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট ফ্যাক্টরি ভবন এবং এক লাখ ৬৫ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট সিগনেচার বিল্ডিং নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্য ডেভেলপার কোম্পানি টেকনোসিটি বিডি লিমিটেডের দুই লাখ বর্গফুট বিশিষ্ট মাল্টিটেন্যান্ট বিল্ডিং নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। পার্কটিতে একটি সার্ভিস বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে দুটি আইটি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান আইটি পণ্য তৈরি ও বিদেশে রফতানি শুরু করেছে।

হাই-টেক পার্ক পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান, হাই-টেক সিটিতে বিনিয়োগকারীদের সব রকম সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৪টি প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই পার্ক থেকে আইটি পণ্য রফতানি হতে শুরু হয়েছে। শিগগিরই এখানে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ বিভিন্ন হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদিত হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন বিনিয়োগ বোর্ডের ১২তম সভায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাই-টেক পার্ক নিমাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আবারো এই হাই-টেক পার্ক আলোর মুখ দেখে। ২০১৪ সালে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের মামলা নিষ্পত্তি করে পার্কের কাজ শুরু হয়।

কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির ওপর স্থাপিত এ হাই-টেক পার্কের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। হাই-টেক সিটিতে স্থাপন করা হয়েছে একটি রেলওয়ে স্টেশন। ঢাকা থেকে হাই-টেক সিটিগামী দুটি কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে যা প্রতিদিন চারবার আসা-যাওয়া করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads