গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই অর্থে ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২১ জেলার পল্লী এলাকার সড়কগুলো সংস্কারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া সংস্কার করা হবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ জেলার সড়কসহ মোট ৩৪ জেলার সড়ক অবকাঠামো। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের অর্ধেক জেলার পল্লী সড়ক সংস্কারে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রকল্প। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে সরকারের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের বা ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার সহজ শর্তে ও অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার তুলনামূলক কঠিন শর্তে ছাড় করবে সংস্থাটি। বাকি অর্থ পরবর্তীতে ঋণ চুক্তি হবে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও এডিবির আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর মনমোহন প্রকাশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন এলজিইডির সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার আলী আকতার হোসেন।
তিনি জানান, চুক্তির আওতায় দেওয়া অর্থ সফল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সে বিষয়ে পরবর্তীতে চুক্তি করবে এডিবি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের পাঁচ বিভাগের ৩৪ জেলার মোট ১৮০ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ২১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক সংস্কার করা হবে। সংস্কারের আওতায় আসবে ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক। বৃক্ষরোপণ করা হবে ২৫০ কিলোমিটার সড়কে। ২০২৩ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
চুক্তি শেষে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার হচ্ছে গ্রামকে শহর বানানো। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটি পূরণে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মনমোহন প্রকাশ বলেন, ২০১৮ সালে এডিবি বাংলাদেশকে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের এ যাবৎকালের এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এডিবির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা। সড়ক সংস্কার বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। সাধারণত সড়ক তৈরি হলেও অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার বা ব্যবস্থাপনা করা হয়। কিন্তু এই প্রথমবারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক সঙ্গেই সব কাজ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ কৃষি, পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
আরো জানানো হয়, সংস্থার নমনীয় ঋণ দান তহবিল অরডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর-কন্সেশনাল লোন) থেকে ১০ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। এ ঋণের সুদের হার ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। তুলনামূলক কঠিন শর্তের ওসিআর রেগুলার ঋণ থেকে আসবে ১০ কোটি ডলার। লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) সঙ্গে এ ঋণে আরো দশমিক ৬ শতাংশ সুদ ধার্য্য করা হয়েছে।
এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বছর সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ। পল্লীর মাত্র ২৮ শতাংশ সড়ক বর্ষায় ব্যবহারের উপযুক্ত থাকে। ইউনিয়ার পর্যায়ের ৮৪ শতাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। আর উপজেলা পর্যায়ে কাঁচা সড়কের হার ৩৩ শতাংশ। যাতায়াত অবকাঠামোর ত্রুটিতে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ। ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামের ৮০ শতাংশ সড়ক সারা বছর ব্যবহারের যোগ্য করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশে পল্লী সড়ক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি খাতের হাত ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ শতাংশ আসলেও এ খাতে মোট শ্রমশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।
এডিবি আরো বলেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ এখনো পল্লী অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের অধিকাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল। পল্লীর নাজুক পরিবহণ ব্যবস্থা, বাজারে অংশ নেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কয়েকটি দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশর কৃষি খাত পিছিয়ে আছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। উৎপাদনশীল কৃষি এলাকায় উচ্চ আয় সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক কেন্দ্রে যাতায়াত সুগম করতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সংযোগ উন্নয়ন, সড়ক অবকাঠামোসমূহকে জলবায়ু সহিষ্ণু এবং নিরাপত্তার বৈশিষ্ট সম্বলিত সব আবহাওয়া উপযোগী করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর কাজ শেষ হলে ৫ কোটি ১৫ লাখ কৃষি নির্ভর মানুষ সুফল পাবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।