বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষমতা এখনো অব্যবহূতই আছে। ২০১৮ সালে স্যাটেলাইটটি চালু করার মাধ্যমে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম যাত্রা শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) ২০১৯ সালে স্যটেলাইটটির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে এজেন্সি এখনো পর্যন্ত বিদেশি কোনো দেশ বা কোম্পানিকে ব্যান্ডউইথ ইজারা দিতে পারেনি। নিম্ন বাজার মূল্য এর অন্যতম কারণ। সরকার এই প্রজেক্ট থেকে বার্ষিক ৩৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা দিলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখান থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক আয় লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই দূরে। ইতোমধ্যে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও নেপাল বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে ব্যান্ডউইথ নেওয়ার জন্য। কিন্তু নিম্নবাজার মূল্যের কারণে বিএসসিএল এই প্রস্তাব নিয়ে সামনে এগোতে পারেনি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এজেন্সির চেয়ারম্যান ডা. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের মোট মূল্য কমে গেছে। সে কারণেই বিএসসিএল বিদেশি প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করতে পারছে না এবং এই মুহূর্তে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সুবিধা নিতে পারছে।
বর্তমানে বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্যান্ডউইথের প্রতি মেগাহার্টজের জন্য বছরে ২,৮২৭ ডলার পরিশোধ করে। একসময় তারা একই সুবিধা পেতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বছরে ৪,০০০ ডলার করে দিতো। আয়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এজেন্সি ১৫০ কোটি টাকা আয় করেছে। অন্যদিকে এর আগের অর্থবছরে আয় ছিল মাত্র ২ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু মূলধনি বিনিয়োগ উঠাতে হলে স্যাটেলাইট প্রজেক্টকে অবশ্যই প্রথম সাত বছরে বার্ষিক ৩৯৫ কোটি টাকা করে আয় করতে হবে।
প্রজেক্ট সম্পর্কিত ব্যক্তিরা জানান, রাজস্ব আয় যদি বর্তমান অবস্থানে এসেই থেমে যায়, তাহলে বিনিয়োগের টাকা উঠানো বিএসসিএলের জন্য কঠিন হয়ে যাবে এবং এই খাতে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে।
নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী ৫৭তম দেশ হিসাবে ২০১৮ সালের ১১ মে মহাকাশের কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ চালু করে বাংলাদেশ। এই স্যাটেলাইট প্রজেক্টের পেছনে বাংলাদেশের ব্যয় ছিল ২,৭০২ কোটি টাকা। দেশের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইটটিতে রয়েছে ১৪ সি-ব্যান্ড এবং ২৬ কেইউ-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার, যার প্রতিটির ৩৬ মেগাহার্টজসম্পন্ন ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা আছে। ট্রান্সপন্ডার বলতে এমন একটি যন্ত্রকে বুঝায় যা একটি সিগন্যাল পাওয়ার পর ভিন্ন রকম আরেকটি সিগন্যাল পাঠিয়ে সাড়া দেয়।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের ২০টি দেশীয় খাতে ব্যবহারের জন্য রেখেছে, কিন্তু সেসবেরও পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্যও স্যাটেলাইটকে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই উদ্যোগও এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ডা. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আমরা আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করছি। নজরদারি সংক্রান্ত কাজে স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য আমরা বাংলাদেশ পুলিশের সাথে একটি সমঝোতা স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেছি।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এটিএম মেশিন, টেলি-মেডিসিন ও টেলি-শিক্ষা সেবায় এই স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্র অনুসন্ধান করছি আমরা। দূরবর্তী স্থানে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে চিহ্নিত করার জন্যেও স্যাটেলাইট ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়েও আমরা ভাবছি।’
নতুন স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ চলছে : সরকার ইতোমধ্যেই ২০২৩ সালের মধ্যে আরো একটি স্যাটেলাইট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মাল্টিন্যাশনাল কনসালটেন্সি ফার্ম ‘প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস’কে নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়নে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএসসিএল। পিডব্লিউসি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত স্যাটেলাইট তৈরির সুপারিশ করবে এবং এটি কোন জায়গা থেকে আনতে হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবে।
পিডব্লিউসি তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরপরই বিএসসিএল একটি প্রজেক্টের প্রস্তাব তৈরি করবে বলে জানান মাহমুদ। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট চালু করার সকল ব্যয় বাংলাদেশই বহন করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।