এক যুগে ডুবেছে ৮৭ লাইটার জাহাজ, উদ্ধার ৪৮

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

এক যুগে ডুবেছে ৮৭ লাইটার জাহাজ, উদ্ধার ৪৮

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ৬ অক্টোবর, ২০১৯

২০০৬ সাল থেকে চলতি বছরের ৭ আগস্ট পর্যন্ত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) অধীনে থাকা ৮৭টি লাইটার জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৮টি জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্বল কাঠামোয় তৈরি এসব জাহাজ বে-ক্রসিংয়ের (সাগর অতিক্রমের) বিশেষ অনুমতি নিয়ে পণ্য পরিবহন করছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণেই এগুলো ডুবে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জাহাজডুবির ঘটনা কমিয়ে আনতে নদীপথের জাহাজ সমুদ্রপথে চলাচল না করা এবং অতিরিক্ত পণ্য বহন না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটের নৌযানগুলো সাগরে চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে না। এসব লাইটার জাহাজ কেবল মেঘনা নদী পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী করে তৈরি হয়। তাই অভ্যন্তরীণ রুটের জাহাজগুলো সাগরে প্রবেশ করলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যাচ্ছে। দুর্বল কাঠামোতে তৈরি এসব লাইটার জাহাজ অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করলেও তলা ফেটে ডুবে যাচ্ছে।’

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের অধীনে নেই এমন লাইটার জাহাজডুবির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট আবুল খায়ের গ্রুপের তিনটি জাহাজ; এমভি টিটু-১৬, এমভি টিটু-১৮ ও এমভি টিটু-১৯ চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রাম-জনতাবাজার নৌপথে নিমজ্জিত হয়।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন যেসব লাইটার জাহাজ ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করে সেগুলো ডব্লিউটিসির অধীনে থাকে। এর বাইরে বিভিন্ন গ্রুপের মালিকানাধীন অনেক লাইটার জাহাজ রয়েছে যেগুলো তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহন করে। এগুলো ডব্লিউটিসির অন্তর্ভুক্ত নয়। আবুল খায়ের গ্রুপ, এমআই সিমেন্ট, ক্রাউন সিমেন্ট, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মক্কা-মদিনা গ্রুপ, কেএসআরএম, রয়েল সিমেন্ট, বসুন্ধরা গ্রুপ, আমান গ্রুপ, ফ্রেশ, দেশ বন্ধু ও আকিজ গ্রুপের অনেকগুলো লাইটার জাহাজ আছে, যেগুলো তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহন করে। এসব লাইটার জাহাজ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) অধীনে নেই। ফলে এগুলোর ডুবে যাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ডব্লিউটিসির কাছে নেই।

বহির্নোঙরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য খালাসের জন্য বর্তমানে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) অধীনে প্রায় ৯০০টি লাইটার জাহাজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান। ডব্লিউটিসির অধীনে থাকা লাইটার জাহাজগুলোর মধ্যে গত ১৩ বছরে ৮৭টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে ৪৮টি ডুবে যাওয়া জাহাজ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।

মাহবুব রশিদ খান বলেন, ‘২০০৬ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৮৭টি লাইটার জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব জাহাজের অধিকাংশ সন্দ্বীপ চ্যানেল এবং কর্ণফুলীর মুখে ডুবে যায়।’ তিনি বলেন, ‘ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর অধিকাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গত ১৩ বছরে ডুবে যাওয়া ৮৭ জাহাজের মধ্যে ৪৮ জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরের হাতিয়া অংশে যেসব জাহাজ ডুবে যায়; সেগুলো উদ্ধার করা খুব কঠিন। সেখানে ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পলি এসে ভরে যায়।’

ডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া ৮৭টি লাইটার জাহাজের মধ্যে ২০০৭ সালে দুটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। এই জাহাজগুলোর একটি ১৫ আগস্ট ক্লিংকার নিয়ে আরামিট সিমেন্ট কারখানায় যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমির কাছে ডুবে যায়। অন্যটি ১১ সেপ্টেম্বর গম নিয়ে মাদার জাহাজ থেকে বন্দরে আসার পথে কর্ণফুলীর লালবয়ার কাছে ডুবে যায়।

এর আগে ২০০৮ সালে ৫টি জাহাজ ডুবে যায়। ২০০৯ সালে ৪টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে ডোবে ৭টি জাহাজ। ২০১১ সালে ২টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১২ সালে ৭টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৩ সালে ১০টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে ৬টি জাহাজ ডুবে যায়। ২০১৫ সালে ৬টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে ১৪টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে ৯টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে ৮টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ৬টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে একটি ২৪ জানুয়ারি গম নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি ইউরিয়া নিয়ে মিরপুর যাওয়ার পথে হাতিয়ায়, ২৪ মার্চ পাথর নিয়ে মিরপুর যাওয়ার পথে কালিগঞ্জে, ১ জুন ক্লিংকার নিয়ে স্ক্যান সিমেন্ট ঘাট যাওয়ার পথে সন্দ্বীপ, ৩০ জুন পাথর নিয়ে মিরপুর যাওয়ার পথে হাতিয়ায়, ৬ আগস্ট নগরবাড়ি যাওয়ার পথে মল্লিকপুরে ডুবে যায়।

২০১৪ সাল পর্যন্ত যেসব জাহাজ ডুবেছে, সেগুলো ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি জাহাজগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ডুবে যাওয়া সোয়াদ নামের জাহাজটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২০১৬ সালের ৭ মে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ ইফতি, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর ডুবে যাওয়া গাজীপুর ও একই বছরের ৭ ডিসেম্বর ডুবে যাওয়া তানভীর তৌসিফ-২ লাইটার জাহাজ দুটি উদ্ধার করা হয়। বাকি ৩৯টি জাহাজ এখনো উদ্ধার করা হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads