এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মানবেতর জীবন

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমিনুর রহমান

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মানবেতর জীবন

  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

পিতা যুদ্ধের ময়দানে অসীম সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখে শেষ অবধি লড়েছিলেন। জীবন বাজীর লড়াইয়ের পুরস্কার হিসেবে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষমও হয়েছিলেন। তবে প্রয়াত পিতার সে লড়াইয়ের প্রেরণা দিন দিন যেন ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে প্রিয় সন্তানের কাছে। উজ্জীবনী শক্তি হারিয়ে জীবন সংগ্রামের দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্লান্ত সন্তান এখন হা-পিত্যেশ করছে অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পেতে। পিতার সে লড়াইয়ের তুলনায় সন্তানের এখনকার এ লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মুক্তির লক্ষ্যে দেখছে না আশার কোনো আলো। তাই বাধ্য হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের বর্তমান নেতা ও সরকার প্রধানের অনুকম্পা লাভের আশায় ক্ষন গুনছে সে।

তার বিশ্বাস বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যার কর্নগোচর হলে ঘুঁচে যাবে মুক্তিসেনা পিতার আদরের সন্তানের দুঃখগাঁথা। শ্যামনগর উপজেলা সদরের হায়বাদপুর গ্রামের শেখ নুরমোহাম্মদ একাত্তরের রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে লড়েছেন। শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধের প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও মিলেছে।

দেশকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিতে সমর্থ হলেও প্রিয় সন্তানদের ঘিরে লালিত স্বপ্নের পুরণ দেখে যেতে পারেননি এ মুক্তিযোদ্ধা। পিতার অকাল প্রয়াণে (২০০১ সালে) হঠাৎ-ই যেন লক্ষ্যচ্যুত হয় পরিবারকে ঘিরে বুনে রাখা তার সব স্বপ্ন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে কর্মক্ষেত্রের সন্ধানে অপরিনত বয়সে বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দিতে হয়েছে সন্তানদের। কঠিন বাস্তবতার পথ মাড়িয়ে সকলেই সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন সমাজ সংসারে টিকে থাকতে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অন্যরা কোন রকমে পার পেয়ে গেলেও সমস্যার আবর্তে অদ্যবধি ঘুরপাক খাচ্ছে শেখ নুর মোহাম্মদের সর্বকনিষ্ট সন্তান আমিনুর রহমান।

এখন বছর সাতাশের যুবক আমিনুর প্রাথমিকের গন্ডি পেরুনোর আগেই পিতার মৃত্যু হয়। বড় ভাইসহ পরিবারের চেষ্টায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর্থিক দৈন্যতায় পরবর্তীতে অগ্রজদের পদাঙ্ক অনুসরন করে তাকেও শিশু বয়সে জড়াতে হয়েছে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে।

বাল্যকাল থেকেই সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠা আমিনুর যেন এখন হাঁপিয়ে উঠেছে। এক সময় পরিবারের উপর নির্ভরশীল এ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান নিজেই এখন ওই পরিবারের নির্ভরশীলতার যায়গা। মা ও এক অসুস্থ ভাইসহ চার সদস্যের সংসারে প্রধান সে। মাত্র কয়েক শতক এর বসত ভিটার বাইরে ন্যুনতম জায়গা-জমি না থাকা পরিবারকে টানতে হয় একমাত্র কর্মক্ষেত্র শ্যামনগর সরকারি মহসীন কলেজে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে নৈশ প্রহরীর কাজ করে। যেখানে মাষ্টার রোলে কাজ করে প্রতি মাসে প্রাপ্ত মাত্র চার হাজার টাকায় সংসার চালানো দারুন কষ্টকর। সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী স্থায়ীকরণের কোনো সম্ভবনাও নেই। ফলে অনিশ্চয়তার দোলাচালে দুলতে থাকা ভাগ্য নিয়ে আমিনুর ভবিষ্যতকে ঘিরে ঘোরতর অন্ধকারে।

মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ শেখের ছেলে আমিনুর জানায় যৎসামান্য মজুরীর টাকায় সবার ঠিক মত খাওয়া জোটে না। তার উপর বৃদ্ধ মায়ের ওষুধ থেকে শুরু করে আরো নানা খরচ রয়েছে। বসত ঘরের যা অবস্থা তাতে রোদ-বৃষ্টি কোনো কিছুই মানায় না। এমতাবস্থায় মাথা গোঁজার জন্য একটি বসতঘরসহ তার চাকুরী স্থায়ী করণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান সে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads