মুক্তমত

একুশ শতকে স্মার্ট ইভটিজিং

  • প্রকাশিত ১ ডিসেম্বর, ২০২০

আজাহার ইসলাম

 

 

 

ইভটিজিং শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন একজনও খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। চুমকি কিংবা জোনাকি পথে একা চললেই তাদের সঙ্গী হতে উতলা হয় বখাটেরা। সাধারণত কিশোরী মেয়ে, শিশু, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী, নারী শ্রমিকরা, বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নারী কর্মচারী, কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ সব স্তরের নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। ইভটিজিং আমাদের সমাজে মহামারীর মতো অবস্থা। রাস্তাঘাটে বখাটেরা নানা কলাকৌশলে নারীদের উত্ত্যক্ত করতেই থাকে। এ যেন বখাটেদের তৃপ্তির ঢেকুর। অনেকে রাস্তা আটকিয়ে কুপ্রস্তাব পর্যন্তও দেয়।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইভটিজাররাও স্মার্ট হয়ে গেছে। আগে শুনতাম রাস্তাঘাটে বখাটেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। কিন্তু বর্তমানে ঘটছে তার উল্টোটা। রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করতে দেখলে লোকে কী বলবে! সেই আত্মসম্মানের ভয়ে কেউবা অভিনব উপায়ে ইভটিজিং করে চলেছে। অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো। যার প্রধান মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার। বর্তমানে অনলাইনে উত্ত্যক্তের ঘটনা অহরহ ঘটছে। করোনার কারণে সব গৃহবন্দি হওয়ায় অনলাইনে উত্ত্যক্তকরণ বাড়ছে। আর এধরনের উত্ত্যক্তের শিকার যারা তাদের সিংহভাগই স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

অনলাইনে কিংবা অফলাইনে হোক, ইভটিজিং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কেউ হয়তো প্রকাশ করছে। তবে অধিকাংশ মেয়েই আত্মসম্মান, প্রাণনাশের ভয়ে প্রকাশ করছে না। ইভটিজিংয়ের কারণে এদেশে নারীদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করা ছাড়াও আত্মহত্যারও নজির রয়েছে। ইভটিজিং এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়। কেউ যদি কোনো স্থানে ইভটিজিংয়ের শিকার হন, তাহলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে।

দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় উত্ত্যক্তকারীর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উত্ত্যক্তকারী তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান আছে। এ ধারায় দায়ী ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এর বাইরে অনলাইনে উত্ত্যক্তকরণের জন্য রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। অনলাইনে উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী সাইবার অপরাধ বলে গণ্য। এ আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

আমার মা-বোন আজ ঘরের বাইরে নিরাপদ নয়। ঘরের চৌকাঠ পেরুলেই বখাটেদের বাজে ইঙ্গিত, কুকথার শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। বখাটেদের অধিকাংশই কিশোর-যুবক, মাদকাসক্ত, লেখাপড়া থেকে ঝরেপরা শ্রেণির। এর শেষ কোথায়? আজ উত্ত্যক্ত করছে কাল ধর্ষণ চেষ্টা বা ধর্ষণ করবে না তারই গ্যারান্টি কী? অথচ আমাদের সমাজ, প্রশাসন এব্যাপারে নীরব ভূমিকায়। ইভটিজাররা সমাজের কীট, আগাছা। ক্ষেতে কীট, আগাছা নিধনে যেমনি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, তেমনি সমাজের কীট নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি।

কীট কিংবা আগাছা যত দ্রুত নিষ্কাশন বা নিধন সম্ভব ততদ্রুত নির্মূল করা উচিত। এসব আগাছা নির্মূলে চাই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ। এছাড়াও সচ্চরিত্রের আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক অসচ্চরিত্রের মানুষ। ইভটিজারদের অন্যতম এক পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক নেতারা। ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ করতে গেলে নেতাদের ছেলে, ভাই বা নিকটাত্মীয়রা নেতাদের পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে থাকে। শুধু ভয় নয়, প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবক্ষয়ও ইভটিজিংয়ের জন্য দায়ী।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

azharislam729¦gamil.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads