বিনম্র শ্রদ্ধা, রেখে যাওয়া আদর্শের প্রতি

সম্পাদকীয়

একজন সৈয়দ আশরাফ - বিনম্র শ্রদ্ধা তোমার রেখে যাওয়া আদর্শের প্রতি।

  • মো. আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ৫ জানুয়ারি, ২০১৯

একজন সৈয়দ আশরাফ - বিনম্র শ্রদ্ধা তোমার রেখে যাওয়া আদর্শের প্রতি।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন কিশোরগন্জের সংসদ সদস্য অথচ হওয়ার কথা ছিল ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি৷ '৯৬ সালে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন শেখ হাসিনা৷ তারপর একাধারে ২২ বছর পার্লামেন্টারিয়ান ৷ এক মেয়াদে প্রতিমন্তী, দুই মেয়াদে মন্ত্রী। আপাদমন্তক বই পড়ুয়া, প্রযুক্তিপ্রেমী আর কর্মীবান্ধব লোক ছিলেন তিনি৷ যে ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসির তিনি ভক্ত ছিলেন, সম্পূর্ণ নাহলেও তার কিছুটা চর্চা তিনি করে গেছেন ঠিকই৷ দলের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়ে৷ কাজ ভাগ করে দিয়েছিলেন, তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের হাতে৷ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন- ক্যামেরাবাজির বাইরেও সেক্রেটারির কাজ থাকে বাকি তিন জন কেন আছে?  সৈয়দ আশরাফ কেমন সৎ?  তিন মেয়াদে মন্ত্রী থাকার পরেও তার কেন সম্পদ কমেছে৷ এসব তার হলফ- নামা, ট্যাক্স রেকর্ড-ই স্বাক্ষ্য দেয় তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা৷ রাষ্টপ্রতির ছেলে হয়েও রণাঙ্গনে যুদ্ধা করেছেন।  ভারতের জেনারেল একাত্তর নিয়ে তার বইয়ে- যে সাদামাটা, শাস্ত আর বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ যোদ্ধা আশরাফের কথা বলেছিলেন৷ তিনি ছিলেন আমাদের এই সৈয়দ আশরাফ৷ যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও, শুকনো রুটি খেয়ে যুদ্ধ করেছেন, স্টেনগান হাতে মাটিতে বুকে ভর দিয়ে৷ সেই সৈয়দ আশরাফ '৭৫- এর ৩ নভেম্বর পিতার মৃত্যুর পর বিলাতে চলে গিয়েছিলেন৷  সেখানে লেবার পার্টির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন৷ শেখ হাসিনার নির্দেশে এমন এক এলাকায় নৌকার জয় ফিরিয়ে এনেছিলেন৷ সেই কিশোরগঞ্জের আসনে, রানিং এমপি ছিলো আল বদর তাত্বিক আতাউর রহমান খান৷ যে খালেদা জিয়াকেও পরোয়া করতো না৷ তারপর, সৈয়দ আশরাফ ৯৬- এ বিমান প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন ওয়ান ইলেভেনের পর, শেখ রেহানার স্বামী ডক্টর শফিক সিদ্দিকী তার এক লেখায় বলেছিলেন- কীভাবে বিপর্যন্ত জিল্লুর রহমান শেখ রেহানাকে দিয়ে অনুরোধ করিয়ে সৈয়দ আশরাফকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে রাজি করিয়েছিলেন ৷ সেই দিন এই দুই জনের জন্য বেঁচে গিয়েছিলো আ লীগ৷ তারপর সেই সৈয়দ আশরাফ, কেমন করে ৫মে জেহাদী বিপ্লব থেকে ঢাকা শহরকে বাঁচিয়েছিলেন। তিনি কেমন সৎ, কত উচুতে ভাবমূর্তি; কেমন সজ্জন- এগুলো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে৷ জানাশোনা হচ্ছে৷ এই ফাঁকে আমি আরও দুইটা তথ্য দিই- 'আমি হিন্দুও নই, মুসলিমও নই'- সৈয়দ আশরাফের খণ্ডিত একটা বক্তব্য৷ যেটা ২০১১ সালে সোনার বাংলা ব্লগে বিকৃত আকারে এসেছিলো৷ দুই বছর পর, ২০১৩ সালে ৫মে তার সাহসিকতায় গুঁটিয়ে যাওয়ারপর হেফাজতে ইসলাম ওই বক্তব্যটা লুফে নেয়, তাকে অভিযুক্ত করার চেষ্টায়।  পুরো ঘটনাটা হচ্ছে- ২০১১ সালে সরকারি বাসডবন পদ্মায়। ওইদিন ১১টি ইসলামী দলের নেতৃত্বে হরতাল পালিত হয়েছিলো৷ সংবিধানে 'রাষ্ট্রধর্ম' ইসলাম থাকার বিষয়ে৷ ওইদিন দেশের সবগুলো পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে বৈঠকে- সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন- 'কমিটি যদিও রাখতে চাইছে; কিন্তু তিনি ছাড়াও সংবিধান সংশোধন কমিটির কয়েকজন সুদস্য এই রাষ্ট্রধর্ম রাখার বিরুদ্ধে৷ 'সংবিধান তো দেশের সব নাগরিকদের জন্যই। সংবিধান যখন পড়বো তখন আমি হিন্দুও না, আমি মুসলিমও না৷ আমি দেশের নাগরিক হিসেবে এটা পড়বো, এইটা মান্য করবো"৷ এটাই ছিলো তার বক্তব্য৷ একথাকেই এখন মাঝামাঝিতে বিকৃত করা হচ্ছে৷ একটা মৃত মানুষের নামে বিকৃত করে কুৎসা রটাচ্ছে ৷ এদের ঘেন্নাপিত বলে কিছুনেই। সৈয়দ আশরাফ ছিলেন আপাদমন্তক অসাম্প্রাদায়িক একজন মানুয। একজন জাজ্বল্যমান নক্ষত্র ছিলেন৷ সৈয়দ আশরাফের - কর্মস্থল জনপ্রশাসনূ মন্ত্রনালয়ে থাকার সময়ে একটা ঘটনা তুুুলেধরি৷ ২০১৬ সালে,  যেটা অনেক পত্রিকায় এসেছিল৷ সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭৩ জন যুগ্ন সচিবকে পদোন্নতি দেয়। ২১ জনকে গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স নেই এই অভিযোগে দলীয় প্রমোশন বঞ্চিত রাখে৷ সোজা কথা, সরকার যাদের মনে করেছে আনুগত্য নেই, 'হার্ডকোর লীগার,' নয় তাদের প্রমোশন আটকে দেয়া হয়। দেশে ফিরে এই অনিয়মের কথা শুনে সবার প্রমোশনে সাইন করা থেকে বিরত থাকেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নির্দেশে, এসএসবি সুপিরিয়র কমিটি এটা করেছে৷ তার পরেও, সৈয়দ আশরাফ নিজের আপত্তি দিয়ে বলেন. প্রমোশনের ক্ষেত্রে একটা পরিস্কার সার্ভিসরুল তিনি তার মন্ত্রনালয়ে চালু করবেন এবং কোনো অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব তিনি বরদাশত্ করবেন না।
তারপর বাদ পড়া এবং অনিয়মের শিকার সবাই প্রমোশন পান, সৈয়দ আশরাফের সততার কল্যাণেই৷ এই নিউজটা সেসময় বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছিল। তখন অনেককেই বলতে শোনাগেছে বেশি ভালো ভালো না। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ দেখিয়ে গেছেন ভালো সেতো ভালোই, সকল ভালই শুভ্র আলো ছড়াতে জানে। স্ত্রীর দুরারোগ্য ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বনানীর বাড়িটিও বিক্রি করেদেন দেন তিনি তবুও সরকারি কোন সহযোগিতা গ্রহণ করেননি ধমনীতে বহমান এই নীল রক্তের মানুষটি।
বাংলাদেশের রাজনীতির এই ক্রান্তিলগ্নে বড্ড প্রয়োজন ছিল সৈয়দ আশরাফের। রাজনিতির যে মাধুর্য তিনি ছরিয়ে গেছেন নিজ এলাকায় কিশোরগঞ্জে সেই মাধুর্যে বশবর্তী হয়ে আজ রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক প্রক্ষাপটেও নিজএলাকার ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ তার বিয়োগে অশ্রুশিক্ত হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। দেশের রাজনীতিতে এরকম সৎ নিষ্ঠাবান বংশীয় আদর্শীক মানুষের বড়ো অভাব। খুবই কম আসে এমন নির্লোভ মানুষ, যে কিনা সকল ধর্ম আদর্শের উপরে উঠে শরীরের নীল রক্তের মর্যাদা দিতে জানে। হয়ে উঠতে পারে সকল দলের সকল ধর্মের আর সমগ্র জাতির সর্বজনশ্রদ্ধেয়। বিনম্র শ্রদ্ধা আপনার রেখে যাওয়া আদর্শের প্রতি ।
লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads