একজন সফল নারী উদ্যোক্তার গল্প

সানজিদা খন্দকার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

একজন সফল নারী উদ্যোক্তার গল্প

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সানজিদা খন্দকার। খুলনার মেয়ে, জন্ম চট্টগ্রামে। বড় হয়েছেন আরেক শহর রাজশাহীতে। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। লেখাপড়া করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে। সানজিদার আশপাশের অনেককেই সন্তান হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিতে দেখে ‘টু আওয়ার জব’ আইডিয়াটা আসে তার মাথায়। ভাবলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চাকরি কীভাবে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। যারা ৮ ঘণ্টা অফিস করতে পারছেন না, তারা কি অল্প সময়ের জন্য কিছু করতে পারেন না! এই সমস্যার সমাধানে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য টু আওয়ার জব’ .িঃযব২যড়ঁৎলড়ন.পড়স নারীদের জন্য সানজিদাই বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে ৪ হাজারের বেশি মেম্বার, ৬০০-এর বেশি কর্মকর্তা আছেন এই প্রতিষ্ঠানে, যারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল নারীদের এগিয়ে যাওয়ার তালিকায় সানজিদা খন্দকার একটি তারার নাম। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সালেহীন বাবু

‘দ্য টু আওয়ার জব’ উদ্দেশ্য কী?

২০ থেকে ৪০ বছর বয়স হলো একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মক্ষম সময়। এ সময়ে ছেলেরা খুব সুন্দরভাবে তার কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকে। কিন্তু একজন নারী ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিয়ে, বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে। অথচ ছেলেমেয়ে উভয়কেই একই কষ্ট করতে হয়। একটি মেয়ের জন্য সন্তান ও পরিবারও জরুরি। তার অনেক দায়িত্ব, মেয়েটি যেন পরিবার মানিয়ে চলতে গিয়ে ক্যারিয়ার থেকে ছিটকে না পড়ে। সেজন্যই আমরা কাজ তার ঘরে এনে দিচ্ছি, যেন সে ঘরে বসে চালিয়ে যেতে পারে তার কাজ।

 

এর পেছনের গল্প কী?

আমি লক্ষ করে দেখতাম আমার বন্ধু এবং পরিবারের অনেক মেয়ে অফিসে ৮ ঘণ্টা সময় দিতে হয় বলে চাকরি করছে না। পরিবারের পাশাপাশি তারাও কিছু একটা করতে চায়। ৮ ঘণ্টা চাকরি করা অনেকের কাছেই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তখন ভাবতাম ২ বা ৩ ঘণ্টার জন্য কিছু যদি করতে পারতাম। তখন খুঁজে পাইনি এই সমস্যার সমাধান। চিন্তা করলাম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমি আমার সমস্যার সমাধান করতে পারি। এ থেকেই আমার প্রতিষ্ঠানের পথ চলা শুরু।

 

এটি চালু হওয়ার পর কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

ক্যারিয়ার ব্রেকে যাওয়া নারীদের যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই সন্ধিহান থাকেন। মনে করেন কাজের বাইরে থাকার জন্য হয়তো তার কাজের সেই যোগ্যতাটুকু আর নেই। আসলে এটা ভুল। ট্যালেন্ট এবং স্কিল বা অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কখনোই একটা ব্রেকের কারণে মুছে যায় না; বরং তাদের মনে কাজ ফিরে পাওয়ার অসম্ভব ইচ্ছে কাজ করে। আর ইচ্ছেটাই তাদের কর্মদক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়।

 

টু আওয়ার্স জবের কাজ কী?

প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দ্বারা প্রতিষ্ঠান ও নারীকর্মীদের সংযুক্ত করা। ফলে ওই নারী উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসেই  করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি  জাতীয় পর্যায়ে হোক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা প্রাইভেট বা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানেরই হোক, তাদের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। ব্লগ লেখা থেকে শুরু করে এই ওয়েবসাইটে পেশাদার লেখা, ব্যবসায় সহায়তা, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি, গ্রাফিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অডিও সাপোর্ট, মার্কেট রিসার্চ, জীবনধারা, বিনোদন, গবেষণা, বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে সাইটে ভিজিট করতে পারবেন। দক্ষ নারীরা .িঃযব২যড়ঁৎলড়ন.পড়স-এ লগ ইন করে সাইটে নিবন্ধন করতে পারবেন। ফেসবুকের মতো লগিং করে নাম ও সাধারণ কিছু তথ্য দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধিত হওয়া যাবে। ওয়েবসাইটিতে ব্যাংক ট্রান্সফার অথবা ভিসা মাস্টারকার্ড অথবা বিকাশের মাধ্যমে নিরাপদে পারিশ্রমিক পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।

 

নারী হিসেবে পরিবারের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?

বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়েছি। আমার নিজের পরিবারও অনেক সহযোগী ছিল এ বিষয়ে। তারা যতটা না আমার জন্য ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ও হাজারো নারীর জন্য।

 

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের সফলতা...

আমার অবস্থান থেকে আমি অনেক সন্তুষ্ট। অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল এই পথটা। একবার যখন দাঁড় করাতে পেরেছি, বাকিটা পথ অবশ্যই পারব বলে মনে করি।

 

আপনার মতো নারীরা কেন এগিয়ে আসবে উদ্যোক্তা হিসেবে?

একটি মেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সে আরো তিনগুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় মা হওয়ার পর। একজন নারী চিন্তা করে কীভাবে তার সন্তানের জন্য একটি ভালো পরিবেশ এবং সময় তৈরি করা যায়। আর এটা একজন উদ্যোক্তার শ্রেষ্ঠ গুণ। আমি মনে করি, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের আরো বেশি এগিয়ে আসা উচিত। কেননা তারা নির্ভেজালভাবে সমাজের ও মানুষের মঙ্গল কামনা করে।

 

নারী উদ্যোক্তা হতে গেলে একজন নারীর কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন?

সবচেয়ে বড় বিষয় আশাকে ধরে রাখা। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, ধৈর্য থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অনেক ধীরস্থির থাকা জরুরি। হতাশ হওয়া যাবে না, কারণ একদিন সফলতা আসবেই।

 

নারীদের উদ্দেশে কিছু কথা...

আমরা নারীরা নিজেরাই নিজেদের অনেক দুর্বল ভাবি। আর তাই আমি বলি, একজন নারী ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের অদ্ভূত সংমিশ্রণের মাধ্যমে প্রকৃত নারী হয়ে ওঠে। নারীকে বলব- নিজেদের সম্মান করুন, নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। নিজের শক্তিকে অনুভব করুন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads