কৃষি অর্থনীতি

এক গ্রামে ১৫৬ জন কৃষকের সরিষা চাষ

  • ''
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

নীলফামারী প্রতিনিধি:

কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভের আশা করছেন নীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের কাছাড়ী পাড়া গ্রামের কৃষক। গ্রামটি এখন ‘সরিষা গ্রাম’ নামে জেলায় পরিচিতি লাভ করেছে।এক গ্রামেই ১৫৬ জন কৃষক করেছেন সরিষা চাষ।

বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ওই গ্রামের কৃষক। বন্যা, খড়ায় ধান চাষে অব্যাহত লোকসানে সরিষা চাষে আগ্রহী হওয়ার আরেকটি কারন দেখছে কৃষি বিভাগ।

ওই গ্রামের বিস্তর্ণ মাঠ জুড়ে এখন হলুদ আর সবুজের সমাহার। একই জমিতে আমন ধান কেটে ফাও ফসল হিসেবে সরিষা চাষে লাভবান হয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। এরপর একই জমিতে বিনা সারে অল্প পরিশ্রমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয় বলে জানান তারা। তা প্রমান করেছে ‘কাছাড়ী পাড়ার সরিষা গ্রাম।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় আট হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও এবার অর্জিত হয়েছে আট হাজার ৬৭২ হেক্টর। এতে অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে ৩৬ হেক্টর।

অপরদিকে, গত বছর সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর। সেই হিসাবে এবার গত বছরের চেয়ে সরিসার আবাদ হয়েছে এক হাজার ৮৯৫ হেক্টার। এ ছাড়াও গত বছর ‘কাছাড়ী পাড়া’ সরিষা গ্রামে সরিষার চাষ হয়েছিল ৩০০ বিঘা। গত বছরের তুলনায় এবার ওই গ্রামে সরিষার চাষ হয়েছে ৪২২ বিঘা। এখানেও অতিরিক্ত চাষ হয়েছে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে একশত ২২ বিঘা।

সুত্র আরো জানায়, ছয় উপজেলায় অর্জিত জমির পরিমান হলো, নীলফামারী সদরে তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর, সৈয়দপুরে ৪৮২ হেক্টর, ডোমারে ৯৬৫, ডিমলায় এক হাজার ২৬২ হেক্টর, জলঢাকায় এক হাজার ২৬৮ হেক্টর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের কাছাড়ী পাড়া গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, ‘দিনের পর দিন ভোজ্য তেলের (সয়াবিন) দাম বৃদ্ধি ও ধান চাষ করে বারবার লোকসানে এই গ্রামে সরিষার চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন, এবারে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করতে খরচ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় সরিষা হয় ৪-৫ মন। প্রতিমন সরিষা বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। যার মূল্য দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। এতে বিঘায় লাভ হয় ১৭ হাজার টাকা।’

অপরদিকে, ‘এক বিঘায় ধান হয় ৬মন। আর ছয় মন ধান ফলাতে কৃষকের ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। ধানের মৌসমে প্রতি ধান বিক্রি হয় সাতশো থেকে আটশো টাকা। প্রতি বিঘায় ধান বিক্রি হয় চার হাজার ৮০০ টাকা। এতে লাভের চেয়ে লোকশানের ভাগটাই বেশী। একারনে ফাও ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক।’

একই গ্রামের সরিষা চাষি আতোয়ার হোসেন জানান, ‘এবার কৃষি বিভাগ থেকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে বীজ পেয়ে দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। যা দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। এ ছাড়াও কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা আয় করা যায়। হাল ও বীজ হলে যতেষ্ট। সেচের কোন খরচ নাই। তিনি বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আগামজাতের সরিষার ফলন ভাল হয়েছে। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে।’

ওই ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, ‘এবারে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে ৪২২ বিঘা (৫৭ হেক্টর) জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। গত বছর ছিল ১৪০ জন কৃষক ও জমির পরিমান ছিল ৩০০ বিঘা। সম্মিলিতভাবে উৎবুদ্ধু করে কৃষকের মাঝে উঠান বৈঠক ও গ্রæপ মিটিং এর মাধ্যমে সরিষার চাষ করা হয়। এই বেøাকে টরি-৭, বিনা-৯, বারি-৯, বারি-১৪ ও বারি ১৮ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধ জনিত কারণে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সরিষার তেল সদরের শকতরা ২২ ভাগ চাহিদা পুরণ করবেও বলে তিনি জানান।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, সদরে তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুন্দুপুকুর ইউনিয়নে ‘কাছাড়ীপাড়া গ্রামে’ কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় এক কেজি করে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরন করা হয়। আর জমির পরিমান ৪২২ বিঘা অর্থাৎ ৫৭ হেক্টর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎপাদিত সরিষার ২১ হাজার লিটার তেল উপজেলার পাঁচ লাখ জনসংখ্যার শতকরা ২২ভাগ ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরন হবে ইনশাআল্লাহ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক, ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, গত দুই মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে এক হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার বেশী চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ কৃষকদের মাঝে উঠান বৈঠক, গ্রæপ মিটিং ও নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে কাছাড়ীপাড়া গ্রামে ১৫৬ জন কৃষককে প্রণাদনার আওতায় এনে ৪২২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষে জেলায় সারা ফেলছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা এখন ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads