১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াট। বিদ্যুতায়নের আওতায় আসছে দেশের শতভাগ মানুষ। অথচ দুই দশক আগেও বাংলাদেশে শতাভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টা ছিল অলীক ভাবনা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকার অদূরের ঘোড়াশাল, সিদ্ধিরগঞ্জের সঙ্গে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ছিল উৎপাদনের বড় ভরসা। সব মানুষতো দূরের কথা, সব শহরেও বিদ্যুৎ ছিল না। আবার যে শহরে বিদ্যুৎ ছিল সেখানে সব এলাকায় থাকত না। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে দেশ এখন ৫০-এ। সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগেই দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক স্পর্শের অপেক্ষা এখন আমাদের। বাংলাদেশের দুই যুগ আগে স্বাধীন হওয়া ভারত-পাকিস্তান এখনো শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, পাকিস্তান সরকার দেড় বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। সে সময় আমাদের দেশে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে দেশে নতুন করে বিদ্যুৎখাত পুনর্গঠন করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইপিপি নীতি গ্রহণ করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ নিয়ে আসেন। এ ছাড়া ক্যাপটিভ নীতি করে শিল্পে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। এরপর জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সঙ্কটের মধ্যে দায়িত্ব নিলেও গত ১১ বছরে আগের পরিস্থিতি আমূল বদলে দিয়েছে সরকার। আগামী মার্চের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হবে। এতে দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশা করা হচ্ছে। অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসায় গ্রামীণ অর্থনৈতিক চালচিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে।
দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা আরইবির আওতাধীন গ্রিডভুক্ত ৪৬১টি উপজেলা এবং অফগ্রিডে একটি উপজেলাসহ (পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা) মোট এক হাজার ৫৯টি গ্রাম রয়েছে। আরইবি তার ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গ্রিডভুক্ত ৪৬১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট ১৭৩টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া, অফগ্রিড এলাকার সব গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানা গেছে। বিদ্যুৎখাতের বেশি অগগতি হয়েছে গত ১১ বছরে। এখন দেশে ১৪০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। নতুন নতুন আরো কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জ্বালানির সংস্থান করতে সরকার প্রথমে দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনের চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের স্থলভাগের গ্যাসের মজুত প্রায় শেষের পথে। এজন্য বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির জন্য দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ টন এলপিজির চাহিদা ছিল। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলছে ২০৪১ সালের মধ্যে চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ লাখ মেট্রিক টনে। সরকার এলপিজির মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। দাম নিয়ে শিগগিরই হতে যাচ্ছে গণশুনানি।