মহানগর

উচ্ছেদেই দায় শেষ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ মার্চ, ২০২১

নকশাবহির্ভূত স্থাপনা অপসারণে প্রায় তিন মাস আগে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এবং সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই অভিযানে দুই হাজারের বেশি অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব দোকানের ইট-খোয়া অপসারণ করেনি সংস্থাটি। ফলে বিপণিবিতানগুলোর চারপাশে ইট-সুরকির স্তূপ হয়ে আছে। ক্রেতা-বিক্রেতাসহ পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এই উচ্ছেদ অভিযানে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ ও সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের পার্কিং খালি করা হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে ফাঁকা পেয়ে পার্কিংয়ের জায়গায় বসতি গড়ছেন ভাসমান লোকজন। তারা পার্কিংয়ের ভেতরই মলমূত্র ত্যাগ করছেন। দুর্গন্ধে মার্কেটগুলোর আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করতে পারছেন না পথচারীরা। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে আসা যাত্রীদের এ সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পথচারীদের অভিযোগ, অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নামে দায়সারাভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। উচ্ছেদের পর মার্কেটগুলোর চারপাশ থেকে ইট-সুরকি অপসারণ না করায় চলাচলে হোঁচট খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে পার্কিংয়ে ভাসমান লোকজন মলমূত্র ত্যাগ করায় ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ডিএসসিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছিল ডিএসসিসি।

অভিযানের প্রথম দিনই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু পিছু হটেনি ডিএসসিসি। টানা এক মাস অভিযান চালিয়ে ৯১১টি অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালায় ডিএসসিসি। পরে এই মার্কেটের লিফট, টয়লেট, বারান্দাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ৭৫০টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া মার্কেটটি চারতলা পর্যন্ত বৈধ হলেও অনুমতি ছাড়াই পাঁচতলা অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছিল একটি চক্র। জাকের সুপার মার্কেট, নগর প্লাজা ও সিটি প্লাজা নামে পৃথক তিনটি ভবন নিয়ে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন দেখা যায়, এই তিনটি প্লাজার প্রবেশপথ ছাড়া চারপাশে ইট-সুরকির স্তূপ হয়ে আছে। ফলে ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। তারা রাস্তার একপাশ ধরে হাঁটাচলা করছেন। পাইকারি মালামাল কিনে গাড়িতে ওঠা-নামা করতে ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়া এই তিনটি ভবনের পার্কিং ফাঁকা দেখা গেছে। তবে ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুর্গন্ধে ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে একই চিত্র দেখা গেছে। নগর প্লাজা থেকে পাইকারি মালামাল (জুতা) কিনে ওই মার্কেটের সামনে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযানের পর এই এলাকার মার্কেটগুলোর পরিবেশ সুন্দর হয়েছে। তবে চারপাশ থেকে ইট-সুরকি অপসারণ না করায় আবার তা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। মার্কেটে মালামাল কিনে বাইরে রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।’ জাকের প্লাজার ব্যবসায়ী কাদের তালুকদার। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন মাস আগে ওই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল ডিএসসিসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইট সুরকিগুলো অপসারণ করেনি সংস্থাটি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ওই মার্কেটগুলো থেকে দুই হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদের পর পরই মার্কেটের সীমানা থেকে ভাঙা ইট-পাথর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরও যদি কোথাও তা ছড়িয়ে থাকে এগুলো অপসারণ বা পরিষ্কার করা হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads