উখিয়ার রত্মাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্না গ্রামে গত বুধবার রাতে শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ নির্মম ঘটনার রহস্য উদঘাটন এখনো সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সর্বস্বহারা প্রবাসী রোকন বড়ুয়ার দীর্ঘক্ষণ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলাপ হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোকন বড়ুয়া বলেন, প্রশাসন তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দিলেও ঘাতক এখনো ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। রোকন বলেন, গত রোববার ঘর পরিস্কার করার সময় আমার রুমে যেখানে আমার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া খুন হয়েছে সেখানে চেয়ারের উপরে ১ কেজি আপেল পাওয়া যায়। অথচ ঘটনার দিন কোটবাজার থেকে মিলা আধা কেজি আপেল ও ছেলের জন্য ওষ্ধু কিনেছে সেগুলো এখনো রান্নাঘরে অক্ষত রয়েছে। এখন সন্দেহ হচ্ছে, এই ১ কেজি আপেল নিয়ে কে বা কারা আমার বাড়িতে এসেছিল তা খুঁজে বের করতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, ঘাতক অবশ্যই পরিচিত কেউ হতে পারে। বেড়াতে আসার ভান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার পরিবারের কোনো সদস্যের সাথে গ্রামবাসীর কারো সাথে কোন বিরোধ ছিল না। তবে ঘটনার দুই-চার দিন আগে থেকে বসতভিটার গাছ কাটা নিয়ে সামান্য তর্কবিতর্ক হয়েছিল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা, মো. আলমগীর।
এর আগে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া পূর্বরত্না আনন্দ ভবন বিহারে নিহতদের স্মারণে আয়োজিত সংঘদান, অষ্টপরিস্কার উৎসবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি স্বজনহারা রোকন বড়ুয়ার সঙ্গে হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলাপ করেন। পরে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ পাষবিক হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুলিশ বিভাগ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মনোবল নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘাতককে আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে পিবিআই ফরেনসিক এবং সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরাও তদন্তের কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি পুলিশ এ ঘটনার আসল রহস্য বের করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। অচিরেই ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে আনতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।
এদিকে নিশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রতিদিন সমাবেশ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই পরিবারে কোমলমতি দুই শিক্ষার্থী সহ ৪জনকে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।সোমবার সকালে রুমখাঁপালং সরকারি সাইরা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুমখাঁপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ জানায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যাক্কারজনক এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানায়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)।