ইসলামে শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা

বিশ্বের সব দেশের শিক্ষক সমাজের কাছে দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার

ফিচার

ইসলামে শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা

  • প্রকাশিত ৫ অক্টোবর, ২০১৮

এসএম আরিফুল কাদের

আজ ৫ অক্টোবর; বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি প্রতিবছর উদযাপিত হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের সম্মান, স্বীকৃতি ও অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে এ দিন দিবসটি উদযাপন করা হয়।

বিশ্বের সব দেশের শিক্ষক সমাজের কাছে দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার। শিক্ষক দিবস পালনের ইতিহাস খুব বেশিদিন আগের নয়। ১৯৯৩ সালে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের ২১০টি জাতীয় সংগঠনের প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন ‘এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ গঠিত হয়। এই আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ক্রমাগত অনুরোধ ও আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালনের শুভ সূচনা করা হয়।

১৯৯৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কিত সাফল্যকে সমুন্নত রাখাসহ আরো সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। দিবসটি বেশিদিন আগের না হলেও প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) শিক্ষকদের যথোপযুক্ত মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। দিয়ে গেছেন শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের প্রকৃত মর্যাদা, যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। আর তাই মানবজাতির পথপ্রদর্শক বিশ্বনবী (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া আল-কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাদের জ্ঞানদান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১)

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড দণ্ডায়মান রাখার কাজটি একজন আদর্শ শিক্ষকই করে থাকেন। যার ফলস্বরূপ মহান আল্লাহ তাদের মর্যাদার মুকুট পরিয়েছেন। অন্যথায় জ্ঞানী লোকদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় হতে হবে নির্বোধদের শামিল। কোরআনের ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই যারা কক্ষসমূহের আড়াল থেকে আহ্বান করছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই বিবেকহীন। যদি তারা আপনার আগমন পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করত, তাহলে এটা তাদের জন্য মঙ্গল হতো, আল্লাহপাক ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৪-৫)

শিক্ষা শুধু মানুষকে শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই নয়; বরং এর পেছনে মহৎ উদ্দেশ্য হলো, মানবজাতিকে বর্বরতা, অমানুষতা ও অসভ্যতা থেকে প্রকৃত মানুষ, শিক্ষিত ও সভ্য জাতিতে রূপান্তর করা। পাশাপাশি জ্ঞানের আলো প্রদর্শককে সম্মানের শিখরে রাখা সব জাতির অবশ্যকর্তব্য। যার প্রমাণ পাওয়া যায় নিচের হাদিসে। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখো। আর তাকে সম্মান করো, যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।’ (আল-মুজামুল আউসাত : ৬১৮৪)

শিক্ষক সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। তাতে ছাত্র যদি নবী (সা.)-এর বংশেরও হয়, তবু সশ্রদ্ধের অধিকার রাখে। যার প্রমাণ মেলে একটি হাদিসে। হজরত শাবি (রহ.) থেকে বর্ণিত, একবার হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) তার সওয়ারিতে (বাহন) ওঠার জন্য রেকাবে (সিঁড়িতে) পা রাখলেন। তখন ইবনে আব্বাস (রা.) রেকাবটি শক্ত করে ধরলেন। এ সময় জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, হে রসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই! আপনি হাত সরান। জবাবে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, না। আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়। (আল ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ২ : ১৯৭)

হজরত ওমর (রা.) ও হজরত ওসমান বিন আফফান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষক ও ধর্ম প্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। যেমন- হজরত ইবনুল জাউজি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ ‘সিরাতুল উমরাইনে’ উল্লেখ করেন, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.), হজরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল : ১৬৫)

সর্বোপরি শিক্ষকরা আমাদের সুশিক্ষা দিয়ে থাকেন। নিঃসন্দেহে তারা আমাদের গুরুজন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাদের জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত করবেন।

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads