সাইফুল বিন শরীফ
আল্লাহতায়ালার অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি হলো মানবজাতি। এই মানবজাতিকে মহান আল্লাহরাব্বুল আলামীন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব তথা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার অন্যতম একটি নেয়ামত হলো মনের ভাব প্রকাশ করার শক্তি, অর্থাৎ বাকশক্তি। মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে বলেই অন্যান্য জীব থেকে স্বতন্ত্র। মানুষের আরো একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করতে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদের জলে ও স্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’। (সুরা ইসরা, আয়াত-৭০)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমাদের এই পবিত্র শহরে, এই পবিত্র মাসে আজকের এই দিনটি যেমন পবিত্র ও মর্যাদাবান, তেমনি তোমাদের পরস্পরের রক্ত, তোমাদের পরস্পরের ধন-সম্পদ এবং পরস্পরের মান-সম্মানও তেমনই পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩৪)
মানুষকে আল্লাহতায়ালা যেমন শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করছেন, তেমনি মানুষের একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছেন। যাতে সমাজে সুষম বণ্টন এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকে। ধনী আর গরিবের মাঝে যেনো দ্বন্দ্ব বিরাজমান না থাকে। একজন ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা অনেক সম্পদ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, সে সম্পদগুলো সব নিজের ভোগবিলাসের জন্য। বেশি সম্পদ যে আল্লাহ তাকে দিয়েছেন সেজন্য তার উচিত আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। অবশ্যই মনে রাখতে হবে তার সম্পদে শুধুমাত্র তার পরিবারের হক নয়, হক রয়েছে তার প্রতিবেশী, দরিদ্র নিকট আত্মীয়-স্বজনের। পর্যাপ্ত সম্পদ থাকার পরেও যদি আপনার পাশের বাড়ির অভাবগ্রস্ত পরিবারের মানুষগুলো অভুক্ত থাকে তাহলে তার দায়ভার সম্পূর্ণ আপনার উপর বর্তাবে। কিয়ামতের দিন এর জন্য আল্লাহর দরবারে আপনাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং পিতা-মাতার প্রতি ইহসান, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৩৬)
বর্তমানে আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা দেখতে পাই, প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে মানুষের কোনো মাথাব্যথা নেই। সবাই নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ঈদের সময় পাশের বাড়ির অসহায় পরিবারের সন্তানদের অনেকেই নতুন জামা-কাপড় পরতে পারে না। অথচ পাশের বিত্তবানরা অনেক দামি দামি পোশাক পরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। কোরবানির ঈদের সময় আস্ত একটা গরু জবাই করে কোরবানি দেন অনেকেই। সেই গরুর মাংস থেকে প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন না করে সারা বছর খাওয়ার জন্য ফ্রিজিং করে রেখে দেন। অথচ এসবের মধ্যে পাশের অসহায় দরিদ্র আত্মীয়স্বজনের অধিকার রয়েছে। এতিম মিসকিনদের অধিকার রয়েছে। পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও সেদিকে কোনো নজর দেননা সমাজের ধনী ব্যক্তিরা। উল্টো প্রতিবেশী ও এতিমদের সম্পদ লুট করে থাকেন সমাজের অনেক প্রভাবশালী ধনীরা। এর জন্য পরকালে আল্লাহর কছে চরম জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে এসব ব্যক্তিদের। ভোগ করতে হবে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি। তাই আমাদের সময় থাকতে এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিবেশীর হোক সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। তাহলেই কেবল ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে।
লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া