মো. আবু তালহা তারীফ
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ দিবসটি পালিত হয়। তথ্য কমিশনের উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশের ৬৪টি জেলায় এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। খবর আদান-প্রদানই তথ্য। তথ্য মানুষের জীবনের চাহিদা মেটায়। বর্তমান বিশ্বে তথ্যের ব্যবহারিক মুখ্য ও বিনিময়মূল্য দুটিই রয়েছে। তথ্য অধিকার সাধারণত জনগণকে তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতা দেয়। তথ্য জানা একটি গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রজ্ঞাপন গেজেটের মাধ্যমে জারি হয়। (অধ্যাদেশ নং-৫০, ২০০৮)
জাতীয় সংসদ কিছু সংশোধনীসহ এ-সংক্রান্ত বিল ২০০৯ সালের মার্চ মাসে অনুমোদন করে। এ আইন এর আগে জারি করা অধ্যাদেশও রহিত করে। তবে অধ্যাদেশের প্রারম্ভিক অংশ স্বীকৃতি লাভ করেছে। তথ্য অধিকারকে বলা হয় উন্মুক্ত তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আইনকে আলোকিত আইন বলা হয়। ১৭৬৬ সালে প্রথম সুইডেনে এ ধরনের আইন প্রবর্তিত হয়, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার আইন নামে বিশেষভাবে পরিচিত। তথ্য অধিকার সংক্রান্ত এ আইনটি প্রাচীনতম আইন বলে সাধারণভাবে স্বীকৃত।
তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০২ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এ দিবসটি। প্রতিদিন পরিবারে, সমাজে, অফিস আদালতে, হাটে, মাঠে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি পথ চলতেও আমরা তথ্যের বিনিময় করি। সংবাদপত্রে, অনলাইন পত্রিকায়, টেলিভিশনে ও বেতারে জনগণের উদ্দেশে তথ্য প্রচার করা হয়। তথ্য অধিকার আদান-প্রদান সংরক্ষণ কীভাবে করতে হবে, সে বিষয় সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে ব্যাপক নির্দেশনা। তথ্য প্রকাশের জন্য নিজেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত জেনে প্রকাশ করতে হবে। সামান্য জেনে তথ্য প্রকাশ করলে সেখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্তরে ভয় নিয়ে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নিজ কানে শুনে, চোখে দেখে, তথ্য প্রমাণ করে অন্যের কাছে প্রকাশ করা ভালো। যেহেতু আমাদের সবকিছু আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল-৩৬)
অন্যের দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করার সময় যাচাই করে বিশ্বাস করতে হয়। তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে বিশ্বাস করতে হবে। হতে পারে আপনাকে ভুল তথ্য দিয়ে সমস্যায় ফেলতে চাইছে। মুহূর্তে পরাজিত করে আপনাকে অপমান করতে চাইছে। ভুল তথ্য দিয়ে কেউ আপনার সঙ্গে অন্যের সম্পর্ক নষ্ট করার অপেক্ষায় আছে। একটি ভুল তথ্য বিশ্বাস করে আপনি পরাজিত হতে পারেন। একটি ভুল তথ্যের কারণে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে। অহুদের যুদ্ধে কাফের মুশরিকরা ভুল তথ্য ছড়ালো, রসুল (সা.) জীবিত নেই। সাহাবিরা রসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় যুদ্ধ বন্ধ করে দিলেন। নবী (সা.)-কে খুঁজতে বের হলেন। কোথায় দ্বীনের নবী (সা.)? এজন্যই আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী যদি তোমাদের কাছে বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা সেই বার্তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়’। (সুরা হুজরাত-৬)
তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা অন্যায়। মিথ্যা কথা বলে তথ্য প্রকাশ করা ইসলাম নিষেধ করছে। ইসলাম ধর্ম কাউকে মিথ্যা শিক্ষা দেয়নি। মিথ্যাকে কবিরা গোনাহ বলা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের কবিরা গোনাহ সম্পর্কে বলব না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবিরা বলেন, হ্যাঁ, বলুন। অবশেষে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এরপর রসুল (সা.) হেলান থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা।’(বুখারি)
একটি তথ্য উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সুন্দর, সাবলীল, যুগোপযোগী মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হবে, যাতে মানুষ সে বিষয়টি শুনতে আগ্রহী হয়। তথ্য উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে ভাষা, বাক্য ও বচন ব্যবহারে অসতর্ক হলে জনগণ ভুল বুঝতে পারে। তথ্য প্রকাশের সময় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়। প্রত্যেক নবী নম্রতা, ভদ্রতা ও কোমল ভাষায় আল্লাহর দেওয়া তথ্য উম্মতের কাছে প্রকাশ করেছেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুসা ও হারুন, ফেরাউনের সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় পাবে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৪৪)
যে তথ্য প্রকাশের ফলে জনগণ উপকৃত হবে, তা শত্রুর কাছে মাথানত না করে জাতির কাছে উপস্থাপন করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। রসুল (সা.) হজরত মুয়াজকে বলেন, হে মুয়াজ, তুমি সত্য বলতেই থাক, যদিও তা তিক্ত হয়। ফেসবুকে অনেকেই মিথ্যা তথ্য প্রচার করে থাকে। যার ফলে অনেকেই আজ ফেসবুকের কথা বিশ্বাস করতে চায় না। ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার করুন, লাইক দিন, কমেন্ট না করলে আপনি মুসলমান নন ইত্যাদি লিখে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে অহরহ। তাই তথ্য সংযোজন বিয়োজন ছাড়া সংঘটিত ঘটনা হুবহু প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়। আমাদের উচিত সবসময় সত্য তথ্য দেওয়া এবং সত্য কথা বলা। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা আহজাব : ৭০)
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক