আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই নিজ দলের নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের আকৃষ্ট করতে কর্মসূচি রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী অনির্ধারিত আলোচনায় বলেছেন- এবারের নির্বাচনে ইয়ং (তরুণ) ভোটাররা বড় নিয়ামক হয়ে উঠবে। এজন্য যুবসমাজকে আকৃষ্ট করে এমন বিষয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রাখতে হবে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা মাঠে যান এবং কাজ করেন। আপনারা জনগণকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।
তিনি আরো বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার ২০১তম বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন আগামী ৩ ডিসেম্বর সোমবার মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক হবে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে। ওই মন্ত্রী বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের এলাকায় সময় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরও মন্ত্রিসভার বৈঠক অব্যাহত থাকবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা না হলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলে আসছেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গত ৬ নভেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন সন্ধ্যায় ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। ৬ নভেম্বর পদত্যাগপত্র দিলেও তা এখনো গৃহীত না হওয়ায় এই চার মন্ত্রী গতকাল সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন। কবে নাগাদ এদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। আর মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়া ৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন।
এদিকে মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভাশেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় বৈঠকে জাতীয় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর গত বছর ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জাতীয় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস পালন করা হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভায় কোম্পানি (সংশোধন) আইন-২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।