ইশতেহারে তরুণদের গুরুত্ব

ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচন

ইশতেহারে তরুণদের গুরুত্ব

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনী প্রচারণায় দেশ সরগরম হয়ে উঠলেও প্রধান দুই জোট এবার জনগণকে কী প্রতিশ্রুতি দেবে তা এখনো চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করেনি। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি এক দিনের ব্যবধানে দুই পক্ষই তাদের ইশতেহার দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে বলে জানা গেছে। এ মুহূর্তে চলছে তারই প্রস্তুতি। 

দলীয় তথ্য মতে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রত্যাশার বিষয়গুলো নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে আনার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণরা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো জোরালোভাবে প্রকাশ করছে কিছুদিন ধরে। বিভিন্নজন এ বিষয়ে তুলে ধরছেন তাদের স্বতন্ত্র ভাবনার কথাও। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তারাও তরুণদের দাবিগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আগামী চার-পাঁচ দিনে আরো গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় পাওয়া গেলে তাও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গত ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা তাদের ভাবনার ইশতেহার প্রকাশ করেন। একই দিন এটি আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাদের অনেকগুলো ভাবনা এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে যোগ করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন জোটের এক শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তারাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন।

গত কয়েক দিন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে কয়েকজন তরুণ রাজধানীর বাড়ির মালিকদের কাছে ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ কীভাবে জিম্মি, তা তুলে ধরেছেন। ভিডিওটির শেষ দিকে এক তরুণী বলছেন, শুনেছি এ মাসেই রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের জন্য তাদের ইশতেহার দেবে। এর প্রতিক্রিয়ায় আরেক তরুণ বলছেন, তারা যদি বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি কঠোর আইন প্রণয়নের বিষয়টি ইশতেহারে রাখত তাহলে আমরা একটু দম ছেড়ে বাঁচতে পারতাম।

অন্য এক ভিডিওতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কয়েকটি আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করছেন কিছু তরুণ। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে তরুণদের ভূমিকা, উদ্যোগী হয়ে ওঠার উপায়, সুশাসন, সবার ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী করতে পারে এবং তরুণরা তাতে কীভাবে সম্পৃক্ত হতে পারেন এসব তুলে ধরা হয়েছে। কয়েকটি ওয়েবসাইট এরই মধ্যে তরুণদের কাছে তাদের ভাবনার কথা জানতে চেয়েছে। এর জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। তরুণদের এসব ভাবনাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুব্রত চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইশতেহারের কাজ প্রায় শেষ। এখন কোনো বিষয় বাদ গেছে কি না তা দেখা হচ্ছে। তরুণদের চিন্তাভাবনার বিষয় আমাদের ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তরুণদের আকৃষ্ট করতে ইশতেহারে বিভিন্ন ধারা রাখা হয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, গত কিছু দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মহাজোটের ইশতেহারের প্রধান বিষয় : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ইশতেহারের মূল স্লোগান হতে পারে ‘উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার’। ২০০৮ সালে ‘দিনবদলের সনদ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট ২০১৪ সালে প্রতিশ্রুতি দেয় ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গড়ার। এবারের ইশতেহারে যোগ হচ্ছে ১০০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান, গ্রাম হবে শহরসহ আরো বেশ কিছু চমকপ্রদ বিষয়।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ১১টি শিরোনামের (অনেকগুলো উপ-শিরোনামসহ) একাধিক অধ্যায়ের বড় অংশ জুড়ে থাকতে পারে বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্র। একই সঙ্গে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনাও থাকছে। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়কে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন, সঙ্কট উত্তরণ ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি শিরোনামে নানা তথ্য এতে স্থান পাচ্ছে।

ইশতেহারের শুরুতে ‘আমাদের অঙ্গীকার’ শিরোনামে ২১ দফা অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর প্রধান বক্তব্যই হচ্ছে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা নিশ্চিত করা’। এ ছাড়া বিভিন্ন শিরোনাম ও উপশিরোনামে সামষ্টিক অর্থনীতি : উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস, কৃষি, খাদ্য, পুষ্টি ও গ্রাম উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প উন্নয়ন, অবকাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ব্লু-ইকোনমি, জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন ও পরিবেশ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থাকছে।

ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের অঙ্গীকার, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ কর্মসূচি, তরুণ যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, শ্রমনীতি, সংস্কৃৃতি ও ক্রীড়া, ক্ষুদ্র-নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের অঙ্গীকার থাকবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের প্রধান বিষয় : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের সবচেয়ে বড় চমক হতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করা।

তরুণদের আকৃষ্ট করতে ইশতেহারে নানা বিষয় থাকছে। এর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ করে সামরিক বাহিনী ছাড়া অন্যান্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাতিল বা বৃদ্ধি, পিছিয়ে পড়া জনগণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রেখে অন্য সব কোটা বিলুপ্ত করা, ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা চালু করা, আগামী তিন বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, বেসরকারি শিক্ষা পুরোপুরি ভ্যাটমুক্ত, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় আনা, শিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয় থাকবে। তরুণদের মন জোগাতে আরো থাকছে মোবাইল, ইন্টারনেটের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা, দেশের বিভিন্ন গণজমায়েতের স্থানে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন বিষয়।

এছাড়া স্থানীয় সরকার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান, নিম্ন আদালতকে সম্পূর্ণভাবে উচ্চ আদালতের অধীন করা, অনাস্থা এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে দলীয় সংসদ সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখার কথাও থাকছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম পুরোপুরি বন্ধ করা, রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন বন্ধ, সাদা পোশাকে গ্রেফতার না করা, বিপথগামী রাজনৈতিক কর্মীদের হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার বিধান থাকছে ইশতেহারে।

দুর্নীতি দমন করে সুশাসন নিশ্চিত, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দুর্নীতির বিচার, ন্যায়পাল নিয়োগ, সংবিধান নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীদের রক্ষার জন্য করা সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ বাতিল, শেয়ারবাজার লুটের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ বিভিন্ন বিষয় থাকবে ইশতেহারে।

স্বাস্থ্য, জ্বালানি, প্রবাসী কল্যাণ, কৃষি, নারী নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপিপ্রধান ঘোষিত ভিশন-২০৩০ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে হুবহু স্থান পাচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তরুণদের আকৃষ্ট করতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে শুধুমাত্র নিরাপদ সড়ক নিয়েই একটি অধ্যায় থাকছে। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের দেওয়া ইশতেহারের প্রায় পুরোটাই স্থান পাচ্ছে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় থাকছে কয়েকটি ধারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads