ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ‘আত্মতুষ্টিতে ভুগছে’। কিন্তু এই যন্ত্রটি যে ভোটারদের টানতে পারেনি, যার জলন্ত প্রমাণ সদ্য সমাপ্ত রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন। ইভিএম নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনেই দ্বিমত রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচনে কারচুপি রোধ করা গেছে। যন্ত্রটি ব্যবহার করে ইসি যে সফল, তা প্রমাণ হয়েছে।
গত রোববার নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইভিএমের ইতিহাস অনেক লম্বা। সেই ২০১০ সাল থেকে এসেছে। কত বিপত্তি, সমস্যা ছিল। ছিল বিরোধী দলগুলোর আপত্তি। কিন্তু এখন সব কেটে গেছে। এই যন্ত্র ব্যবহার করার ফলে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা রোধ হয়েছে। ভোটাররাও এ নিয়ে আপত্তি তুলছেন না। বিরোধী দলগুলোও এই যন্ত্র ব্যবহারে আর বিরোধিতা করছে না। কাজেই আমরা যে সফল, তা প্রমাণ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন যখন ইভিএম নিয়ে ‘আত্মতুষ্টিতে ভুগছে’, তখন রংপুর-৩ উপনির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান। সাত থেকে আট শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিও ছিল না; কিন্তু কী করে ভোটের হার ২১ শতাংশ হলো, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ উপনির্বাচন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ইভিএমে হয়েছে।
ইভিএমে কারচুপির বিষয়ে কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও এই যন্ত্রটি যে ভোটারদের টানতে পারেনি, সে মন্তব্য করছেন খোদ ইসি কর্মকর্তারাও। তাদের মতে, ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি টেকনিক্যাল। অনেকেই সিল মারার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে যন্ত্রে অভ্যস্ত হতে পারছেন না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোটার এডুকেশন বা ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রচারে ঘাটতি রয়েছে।
সাধারণত উপনির্বাচনে ভোটের হার একটু কম থাকে। তারপর আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর কারণে রংপুর-৩ আসনের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। এত কম ভোটার উপস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে আর হয়নি। এর পেছনে ভোটারদের যন্ত্রের প্রতি অনাগ্রহকেই কারণ হিসেবে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে তারা এ যন্ত্রকে জনপ্রিয় করতে ভোটারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পক্ষে তারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। ব্যালট সিট মারার সনাতন পদ্ধতিতে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। আর ইভিএমের ছয় আসনে ভোটের হার ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
২০১০ সালে যখন ইভিএম ব্যবহারের প্রচলন শুরু করে এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন, তখন পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রিয়তা অর্জন ও ভোটার অভ্যস্ত করে তোলার পর জাতীয় নির্বাচনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। কিন্তু নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ভোটারদের অভ্যস্ত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। বরং অভ্যস্ত না করেই যন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেছেন, যন্ত্রে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়বে। আর এজন্য শুরু করতে হবে। এখন জনপ্রিয়তার জন্য বসে থাকলে তো হবে না। তাই সীমিত আকারে সব নির্বাচনেই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১০ সালে শামসুল হুদা কমিশন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় এক হাজার ২৫০ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়। পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালে ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। এমনকি বিকল হওয়ার কারণও উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরো উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কে এম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা করে ইভিএম তৈরিতে নিচ্ছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এজন্য কমিশন হাতে নিয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





