যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলতিবছরের জুলাই মাসে এই শাস্তি কার্যকর করা পুনরায় শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে সেটি বেআইনি হতে পারে এই আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল সরকার এর বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে।
আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ইন্ডিয়ানা রাজ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে চারজন বন্দী আইনি চ্যালেঞ্জ করেন। এর পর একজন বিচারক রায় দেন যে তাদের এই চ্যালেঞ্জ সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্য একটি আদালতের আদেশে পঞ্চম ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে।
ডিসট্রিক্ট জাজ টানিয়া এস চুটকান বুধবার বলেছেন, এই চার ব্যক্তিকে আদালতে তাদের মামলার শুনানি করতে না দিলে তাদের 'অপূরণীয় ক্ষতি' হয়ে যেতে পারে।
তাদের মৃত্যুদণ্ড যেভাবে ইনজেকশন দিয়ে কার্যকর করা হবে সেটা নিয়েই এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা দীর্ঘ সময় ধরে মুলতবি ছিল। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার এবছরের শুরুর দিকে এই মুলতবি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর পর বর্তমান সরকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া ফের শুরু করে।
যে পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আদালতের বেশ কয়েকটি রায়ের পর এটি বন্ধ ছিল।
তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ড্রাগ একসাথে মিশিয়ে আসামীর শরীরে সেটি ইনজেকশনের সাহায্যে প্রবেশ করিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
গত জুলাই মাসে মি. বার বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন শুধুমাত্র পেনটোবারবিটাল নামের একটি ড্রাগ ব্যবহারের জন্যে। এই ড্রাগের ফলে নার্ভাস সিস্টেম ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসামি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
কিন্তু বিচারক চুটকান রায় দিয়েছেন যে এটা কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সেগুলোতে এ বিষয়ে রয়েছে একেক ধরনের আইন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা অনুসারে, জাতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আদালতে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আদালতে অপরাধের বিচার হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু অপরাধ আছে, যেমন মুদ্রা জাল করা, সেগুলোর বিচার হয় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। কারণ এখানে সংবিধান ভঙ্গের মতো অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু অন্যান্য অপরাধ কতোটা গুরুতর তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় সেটা কোথায় বিচার করা হবে।
১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক সিদ্ধান্তে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তখন নির্ধারিত সকল মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছিল।
পরে ১৯৭৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট কয়েকটি রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল করে এবং ১৯৮৮ সালে সরকার একটি আইন তৈরি করে যাতে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়।
ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের দেওয়া তথ্য অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭৮ জনকে কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে মাত্র তিনটি।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ৬২ জন আসামি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা