ফিচার

ইতিহাস যেমন মাকে নিয়ে গর্ব করে

  • আমাতুল্লাহ ইউসরা
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

হজরত আবু বকরের কন্যা আসমার (রা.) বয়স তখন প্রায় একশ বছর। তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর এসে বললেন, ‘মক্কার চারপাশে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নেতৃত্বে শত্রুরা অবস্থান নিয়েছে। আমি কি তাদের সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হব, না-কি তাদের বশ্যতা স্বীকার করব?’ কোনো মা কি চান চোখের সামনে আপন পুত্রের মৃত্যু দেখতে? তারপরও তিনি বললেন, তুমি যদি আল্লাহর জন্য লড়াই করে শহীদ হও তাহলে তা হবে আমার জন্য গর্বের বিষয়। আর যদি গাজী হও তাহলে সেটাও হবে আমার জন্য গর্বের বিষয়। আর যদি তুমি দুনিয়ার জন্য লড়াই কর, তাহলে মনে রাখবে এ জন্য আমি তোমাকে দুধ পান করাইনি। তোমাকে এ জন্য লালনপালন করিনি। আবদুল্লাহ বললেন, আমি দুনিয়ার জন্য লড়াই করব, এ কথা কখনো ভাবিইনি। দুনিয়ার কথা তো আমার চিন্তায়ও আসেনি। আসমা (রা.) বললেন, তাহলে যাও, তরবারি নিয়ে বেরিয়ে পড়। শত্রুরা আবদুল্লাহর মৃতদেহ অবমাননা করতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি বর্ম পরে নিচ্ছিলেন। তখন আসমা (রা.) একটি বাক্য বলেন-যা আরবিতে প্রবাদ হয়ে গেল।

‘জবাইকৃত ছাগল চামড়া ছিলায় ব্যথা পায় না।’ অর্থাৎ আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার পর তারা যাই করুক না কেন তাতে তোমার কিছু যায় আসে না। সুবহানাল্লাহ, ইতিহাস এমন মাকে নিয়েই গর্ব করতে পারে।

উম্মে আম্মারার পুত্র হাবিবকে মুসায়লামা ইবনে কায্যাব কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলল। একজন এসে তাঁর মাকে বলল, আপনার পুত্র হাবিবকে এইভাবে হত্যা করা হয়েছে। উম্মে আম্মারা বললেন, ‘এই দিনের জন্যই আমি তাকে দুধ পান করিয়েছি।’

আমরা এমন মা কোথায় পাব। কোনো মা তাঁর সন্তানের জন্য আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার কথা তো ভাবেই না এবং সেটা আশাও করে না।

সেসব মায়েরা তাঁদের সন্তানদের আকৃতি দেখেননি; তাঁদের বীরত্ব দেখেছেন, আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া দেখেছেন। মা সন্তানকে বিদায় জানাচ্ছেন, যাও, আল্লাহর পথে লড়াই কর এবং শহীদ হয়ে যাও।

আবদুল্লাহ ও তার সঙ্গীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লড়াই করলেন। তিন হাজারের মোকাবেলায় মাত্র চারজন। কিন্তু আছর পর্যন্ত কেউ কাছে ঘেঁষতে পারল না। শেষ পর্যন্ত তারা ওপর থেকে পাথর ছুড়ল। একটি পাথর এসে সরাসরি আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরের মাথায় লাগল এবং রক্তের ফোয়ারা ছুটল। 

‘আমরা এমনই যাদের পিঠে কখনো কোনো আঘাত লাগে না; বরং আমরা বুক পেতে আঘাত গ্রহণ করি এবং রক্ত দ্বারা পাঞ্জা রঞ্জিত করি।’ তাদের হুঁশ থাকা অবস্থায় কেউ তাদের কাছে ঘেঁষতে পারেনি। এরপর শত্রুপক্ষ পাথর নিক্ষেপ জোরদার করে। তখন আবদুল্লাহ বলেন, ‘হে আমার মা আসমা, আমি যদি নিহত হই তাহলে আমার জন্য কাঁদবেন না। আপনার আদেশেই আমি ইসলামের জন্য যুদ্ধ করেছি। দ্বীনের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমি সে চেষ্টা করেছি। আমি আমার আত্মমর্যাদা রক্ষা করেছি। তলোয়ার ছাড়া আমার কোনো সঙ্গী ছিল না। তলোয়ারই ছিল আমার শেষ সঙ্গী।’

‘তার মস্তক ছিন্ন করা হয় এবং তাকে শূলে চড়ানো হয়।’ মদিনায় তার ছিন্ন মস্তক ও দেহ তিন দিন প্রদর্শিত হয়। তিন দিনের দিন আসমা (রা.) তাঁর পুত্রকে শূলে চড়ানো অবস্থায় দেখলেন। যদিও তাঁর কলজে ফেটে যাচ্ছিল, তবুও তিনি বললেন, ‘এই সোয়ারি থেকে এই সোয়ারকে নামানোর সময় এখনো হয়নি? এই সোয়ারি থেকে এই সোয়ারকে নামানোর সময় এখনো হয়নি?’ তিনি আবদুল মালিকের কাছে এই মর্মে চিঠি পাঠালেন যে, ‘জালেম, আমার পুত্রের লাশ আমার কাছে অর্পণ কর। আমি নিজ হাতে আমার পুত্রের দাফন করব।’ আবদুল মালিক তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে লিখে পাঠাল, আবদুল্লাহর লাশ হস্তান্তর করে দাও। হাজ্জাজ লাশ হস্তান্তর করলেও ছিন্ন মস্তক দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসমা (রা.) নিজ হাতে তাঁর পুত্রকে গোসল দিলেন। কাফনের কাপড় পরালেন। জানাজায় শরিক হলেন এবং নিজ হাতে লাশ কবরে নামালেন। সাতদিন পর আসমা (রা.) ইন্তেকাল করলেন এবং পুত্রের সঙ্গে মিলিত হলেন। মা-পুত্রের কবর মক্কায় জান্নাতুল মালায় রয়েছে।

মরিয়ম (আ.)-এর নাম ছাড়া কোরআনে আর কোনো নারীর নাম নেই। তাঁর নাম এজন্য এসেছে, লোকেরা তাঁর পুত্র ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বলে সাব্যস্ত করেছিল। আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, ঈসা আল্লাহর পুত্র নয়; মরিয়মের পুত্র। এ ছাড়া কোরআনে আর কোনো সৎ নারীর নাম আসেনি, অসৎ নারীর নামও আসেনি। প্রত্যেক নারীর নাম এসেছে পুরুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে।

আলেমগণ বলেন, নারীদের নাম প্রকাশ করা আল্লাহর পছন্দ নয়। তাহলে চেহারা প্রকাশ করা কীভাবে তাঁর কাছে পছন্দনীয় হবে। পর্দা নারীদের জন্য, তাদেরকে অবশ্যই পর্দা করতে হবে। তাহলে তাদের মধ্যে আয়শা জন্ম নেবে, আসমা জন্ম নেবে, খাদিজা, ফাতিমা, সখিনা, জয়নব জন্ম নেবে। আর যদি তারা বাজারে ঘোরাফেরা করে তাহলে পরবর্তী বংশধর কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ ছাড়া আর কিছুই জন্ম নেবে না। তাদের থেকে কাঁটা ছাড়া আর কিছুই মিলবে না। পূর্বে যা হয়েছে তার জন্য তওবা করতে হবে। আগামীর জন্য হিম্মত করতে হবে।

 

লেখিকা : চেয়ারম্যান, দোআ টিভি

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads