মাদারীপুরের কালকিনিতে আড়িয়াল খাঁ নদে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিকহাড়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে ফসলিজমি, একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাইক্লোন সেন্টার। এছাড়া বিগত দিনে নদী ভাঙ্গনে শতাধিক পরিবার ভিাটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে । বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে এ নদের ভয়ঙ্কর তান্ডব। অপরদিকে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শতাধিক পরিবার। আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙ্গন কবলিত অনেক মানুষ কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দ্রুত ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে রয়েছে আলীনগর এলাকার চরহোগলপাতিয়া গ্রাম। এ গ্রামের উপর দিয়েই বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। এ গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। নেই কোন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও। বিগত দিনেও নদী গর্ভে চলে গেছে এ গ্রামের অনেক বাড়িঘর, কয়েকশ’ একর ফসলি জমি ও চরহোগলপাতিয়া জামে মসজিদ। কিন্তু তখন কেউ এগিয়ে আসেনি এ গ্রামের মানুষের পাশে। গত দুই দিন আগে আড়িয়াল খা নদী গর্ভে চরহোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কাম সাইক্লোনসেন্টার, প্রায় ১ কিলোমিটার জমির ধান, আখ ও পাটসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমি চলে গেছে। এছাড়া বর্তমানে একের পর এক আড়িয়াল খাঁ নদীর পেটে চলে গেছে চরহোগলপাতিয়ে গ্রামের আসাদুল বেপারী, এমদাদুল হাওলাদার, শিপন বেপারী, শহীদ বেপারী, তালেব বেপারী, চুন্নু তালুকদার, অমর হোসেন, সোবহান তালুকদার, কামাল তালুকদার, রুবেল, বেনু বেগম ও আসমা আক্তারসহ প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি। নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে কুদ্দুস তালুকদার, সামাদ বেপারী, হামেদ বেপারী, শহীদ বেপারী, আজগর বেপারী ও জলিল আকনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি দুরে সরিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে হোগলপাতিয়াসহ ৫টি গ্রামের সকল মানুষ নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বলেন, চরহোগপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ পর্যন্ত তিনবার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে পড়ে নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় দেখা গেছে নির্মাণ কাজে রডের বদলে বাশের চটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাই ভবন ভেঙ্গে বাশের চটিগুলো বের হওয়ায় এনিয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে গতবছর ভাঙ্গনরোধে নদীতে নামে মাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তা নিয়ে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।
ক্ষতিগ্রস্ত ময়না ও রেনু খানমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী আমাগো ঘড়বাড়ি, জায়গা জমি সব কেড়ে নিয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধ না করা হলে আমাগো বাকি যা আছে সব নদীতে চলে যাবে। আমরা গ্রামবাসি নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে চাই। এ ছাড়া আমরা কোন সাহায্য-সহযোগীতাও পাইনি।
কৃষক আলমগীর ও জলিলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাগো ফসলের সকল জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। আমরা এখন কিভাবে বাঁচবো। আমাগো কৃষকের কান্না কারো কিছু আসে যায়না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নদী ভাঙ্গনে চরহোগপাতিয়া গ্রামের সব শেষ হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করছি ভাঙ্গন কবলিত মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য।
আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন বলেন,আড়িয়াল খাঁ ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিতে বহুবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় এখনও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা করা হবে। আর বিদ্যালয় আবার নতুন জায়গায় উত্তোলন করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না।