শীলা আহমেদ ও আসিফ নজরুল

মুক্তমত

আসিফ নজরুল স্বাধীনতার পক্ষের না বিপক্ষে, জানালেন শীলা আহমেদ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বামীর জন্মদিনের শুভেচ্ছা সহ জানালেন মতামত।

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ১২ জানুয়ারি, ২০১৯
আসিফ নজরুল ও শীলা আহমেদ 

গবেষক, কলামিস্ট ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল। একনামেই তার পরিচিতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক স্বাধীনতার পক্ষের লোক না বিপক্ষের লোক? এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তার স্ত্রী শীলা আহমেদকে। এমন প্রশ্নে চুপ থাকলেন না হ‌ুমায়ূন আহমেদ কন্যা শীলা। স্বামীর আসন্ন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরলেন নিজের মতামত। সেই লেখায় আসিফ নজরুলের সঙ্গে নিজের পরিচয় পর্ব থেকে শুরু করে সংসার জীবনে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন জীবনের উদাহরণ টেনেই শীলা নিজের যুক্তি দাঁড় করান। শীলার লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আসিফ নজরুল ও শীলা আহমেদ 

‘‘এইতো, কয়েক দিন পরেই আমার স্বামীর জন্মদিন। আমার ১১ বছর বয়সে ওর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। ও তখন বিচিত্রায় কাজ করত। আমার বাবার একটা ইন্টারভিউ নিতে এসেছিল। আমাদের বাসায় আসলেই অনেক গল্প শোনাত। সেই সময় ও প্রচণ্ড ভাবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে জড়িত। কীভাবে এই দেশ কে সোনার বাংলাদেশ বানানো হবে, সেটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন। জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলন করছে, মিটিং করছে, মিছিল করছে! আমি ওর বিরাট ভক্ত হয়ে গেলাম! আমার কাছে মনে হতো, কি সাংঘাতিক দেশপ্রেমিক একজন মানুষ! সেই ১১ বছর বয়সে, ও আমার কাছে একটা হিরো হয়ে গেল!

আমাদের পরিচয়ের ২১ বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের বিয়ের পর নানা কারণেই আমার আত্মীয়স্বজন কেউই খুশি হয়নি। আমার এক আত্মীয় একদিন আমাকে ফোন করল, খুবই মন খারাপ করে বলল ‘শীলা, তুমি এমন কাজ করতে পারলে? স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির লোককে বিয়ে করলে?’

-কেন ‘স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি’এর লোক হবে? ওর মতো দেশ প্রেমিক আমি কখনো দেখিনি! তুমি কে ওকে ২০-২১ বছর আগে থেকে চিনো না! কীভাবে এমন কথা ওকে নিয়ে বলতে পারলে?

-তখন দেশ প্রেমিক ছিল, এখন আর নেই। তুমি একদিন দুঃখ করবে।

দুঃখ অবশ্য আমি করি। ভেবেছিলাম আমি হাসিখুশি, আড্ডাবাজ, একজন মানুষকে বিয়ে করেছি! কিন্তু দেখি, বেশির ভাগ সময়ই ও খুব চুপচাপ থাকে। কথা বলে না, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলে না। খুবই মনমরা হয়ে যায়। আমি যদি জানতে চাই, কেন মন খারাপ তোমার? হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকায়। বলে, পেপার পড়ো নাই আজকে?

-প্রতিদিনই তো পেপার পড়ি ।

-বলত কেন সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয় না?

-এইজন্য মন খারাপ তোমার?

আবার আরেকদিন মন খারাপ করে, গুম নিয়ে। আরেকদিন ব্যাংকের টাকা পাচার নিয়ে। আরেকদিন তনুর জন্য। আরেকদিন বিশ্বজিতের জন্য। এই লিস্ট আর শেষ হয় না।

৩-৪ দিন আগে আমি বললাম, চল দুজন বের হই, তোমার ঘড়ির বেল্ট ছিঁড়ে গিয়েছে, জন্মদিনে একটা ঘড়ি কিনে দিই। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। বলল- এই রকম একটা নির্বাচনের পর তোমার জন্মদিন-ঘড়ি এই সবের কথা মনে হয়?

হ্যাঁ আমার তো মনে হয়ই। অনেক আনন্দ করতে ইচ্ছা করে! তোমার অনেক ভুলভ্রান্তি, অনেক দোষ, সবই তো দেখলাম। ঝগড়াঝাঁটি তো কম করলাম না! কিন্তু ১১ বছর বয়সে যে আমার মনে হয়েছিল, ‘কি সাংঘাতিক দেশপ্রেমিক’ সেই মনে হওয়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই চল সেলিব্রেট করি জন্মদিন, প্রেমের দিন, ঝগড়ার দিন,মন ভালোর দিন, মন খারাপের দিন আর আমাদের এক সাথে থাকার সব দিনগুলো। বলাতো যায় না, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তোমার লেখালেখি বন্ধ করে দেয়া হবে, তোমার নামে কোনো মামলা হবে, তোমাকে ‘স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি’র লোক বানানো হবে, অথবা তুমি গুম হয়ে যাবে! আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে তো সবই সম্ভব!’’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads