মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ
পৃথিবীতে মহান আল্লাহর খলিফা হিসেবে মানুষের প্রধান দায়িত্ব হলো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তিজীবনের স্বাধীনতা যেমন জরুরি, তার চেয়ে বেশি জরুরি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড বা রাষ্ট্র, যেখানে স্বাধীনভাবে বসবাস করা যায়। স্বাধীনতা না থাকলে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও পালন কোনোটাই যথার্থভাবে সম্ভব নয়। সে কারণেই হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে মক্কায় পাড়ি জমাতে হয়েছিল। হজরত মুসা (আ.)-কে নীল নদ পাড়ি দিয়ে একটি স্বাধীন জনপদ অনুসন্ধান করতে হয়েছিল।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (ইব্রাহিমের বাবা) বললেন : ইব্রাহিম! তুমি কি আমার উপাস্য দেব-দেবীদের থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছ? তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব, আর (যদি বেঁচে থাকতে চাও তাহলে) তুমি আমাকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাও। তিনি (ইব্রাহিম) বললেন : সালাম আপনাকে। অবশ্য আমি আপনার জন্য আমার রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তিনি আমার প্রতি অতিশয় দয়ালু। আর আমি (একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের সন্ধানে) আপনাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ছেড়ে যাচ্ছি আপনারা যাদের পূজা করেন, সেসব দেব-দেবীকে। আর আমি আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব, আশা করি আমি আমার রবের কাছে প্রার্থনা করে ব্যর্থ হব না।’ (সুরা মারইয়াম : ৪১-৪৮)
হজরত মুসা (আ.)-এর স্বাধীন আবাসভূমি অনুসন্ধান প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, তুমি কি মুসা ও তার সম্প্রদায়কে ছেড়ে দেবে দেশের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং তোমার দেবতাদের বর্জন করতে? সে (ফেরাউন) বলল, আমরা অবশ্যই তাদের পুরুষদের হত্যা করব এবং নারীদের জীবিত রাখব, আমরা তো তাদের ওপর প্রবল ক্ষমতার অধিকারী। মুসা তার জাতিকে বলল, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই জমিনটা তো আল্লাহর, তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকার দান করেন। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্য নির্ধারিত।’ (সুরা আল-আরাফ : ১২৭, ১২৮) শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) জন্মভূমিতে দীর্ঘ ১৩ বছর আল্লাহর দ্বীন ‘ইসলাম’ প্রচারের মিশন পরিচালনা করতে গিয়ে স্বজাতির মাধ্যমে নির্যাতিত হন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিজরত করেন। হিজরতের পর ঐতিহাসিক মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রসুল (সা.) পরিচালিত মদিনাকেন্দ্রিক মিশনই অতি অল্প সময়ের মধ্যে গোটা আরব উপদ্বীপে ইসলামকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব
রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ
                                
                                
                                        
                                        
                                        
                                        




