‘ছেলেবেলা থেকেই বাবাকে দেখতাম প্রচুর বই পড়তে পছন্দ করতেন। দেশীয় লেখকের বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি লেখকের বইও মৃত্যুর আগপর্যন্ত সংগ্রহ করে পড়েছেন। বইয়ের প্রতি বাবার এমন অনুরাগ থেকেই আমার ভেতরও জন্ম নেয় ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকে লাইব্রেরি করার চিন্তা না থাকলেও বাবার অনুরাগ ও আমার ভালোবাসার জায়গা থেকেই গড়ে তুলেছি এই পাঠাগার।’
এভাবেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মেইন গেটে গড়ে তোলা বুকল্যান্ড লাইব্রেরি সম্পর্কে বলছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা হাসান তুলি।
এছাড়া নবপ্রজন্মের প্রযুক্তি নির্ভরতা, পাঠাগার বিমুখতা, মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন নেতিবাচক দিকে ঝুঁকে যাওয়া থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিতে আনার মনোভাব থেকেও পাঠাগার গড়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।
২৫ হাজার বইয়ের বিশাল সংগ্রহের বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ব্যাংক নোট, ডাকটিকিট, পুরোনো যুগের বিভিন্ন প্রযুক্তি। যা নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার পাশাপাশি গবেষণায়ও সাহায্য করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। পাঠাগারটিতে বর্তমানে প্রায় হাজারখানিক সদস্য থাকলেও নিয়মিত বই পড়ুয়া সদস্য আশানুরূপ নয় বলে জানান ফারহানা হাসান।
বসুন্ধরা এলাকায় পাঠাগার গড়ে তোলার বিষয়ে ফারহানা হাসান বলেন, ‘প্রথমত আমি এই এলাকায় বসবাস করি, দ্বিতীয়ত সৃজনশীল বা কালচারাল বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ধানমন্ডিসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকে। এখানকার ও আশপাশ এলাকার প্রজন্মের কথা ভেবেই বসুন্ধরায় গড়ে তোলা।’
শুধু বইয়ের সংগ্রহশালাই নয়, এর বাইরেও শিশুদের বাংলা বানান, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁঁকা প্রতিযোগিতা, গল্প বলা প্রতিযোগিতা, দিবসভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। সপ্তাহে একদিন শিশুদের গিটার, ছবি আঁকা, আবৃত্তি শেখানোর ও বিভিন্ন কর্মশালা, উৎসবের উদ্যোগ নিয়েও কাজ করছেন তিনি। কাজ করছেন উদ্যোক্তাদের নিয়েও।
নিজের ও বাবার বাসায় থাকা বইগুলো নিয়ে পাঠাগারের যাত্রা শুরু করেন। পাঠাগারের নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বই সংগ্রহ করে থাকেন এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রচারকাজ সম্পন্ন করে থাকেন বলে তিনি জানান।
লাইব্রেরিটির বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হলো হেলথ এডুকেশন। নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন গ্রামে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যবার্তা বিষয়ে অনুষ্ঠান করে আসছেন তারা। এছাড়াও নারীদের কর্মজীবী করে গড়ে তুলতে নার্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০টি জেলায় স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবার্তা নিয়ে কাজ করেছেন বলে জানান ফারহানা হাসান।
‘বুকল্যান্ড জার্নাল’ নামে একটি শিশুতোষ পত্রিকা প্রকাশ করা হয় পাঠাগার থেকে। যেখানে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন লেখা লিখে থাকেন।
বর্তমানে শিশু-কিশোররা পাঠ্যবইয়ের বাহিরে যেন কিছু পড়তে পারে এবং লিখতে পারে সেই উদ্দেশ্যে পত্রিকাটি প্রকাশ করছেন বলে জানান সম্পাদক ফারহানা হাসান তুলি। পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সাহিত্য, খেলাধুলা, ভাষা শেখা, শিক্ষার্চচা, ইতিহাস, জোকস, আঁকাআঁকিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।
পাঠাগারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা হাসান বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে এমনভাবে গড়ে দিয়ে যেতে চাই যেন আমি একদিন না থাকলেও পাঠাগারের কার্যক্রম ঠিকঠাক মতোই চলে। এর বাইরে গ্রাম পর্যায়ে এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আরো বই উপহার দিয়ে পাঠাগার গড়ে তুলতে চাই।
এক হাজার টাকা ডিপোজিটের মাধ্যমে পাঠাগারের সদস্য হওয়ার উপায় রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে সদস্য বাড়িতে বই নিয়ে পড়তে পারবে। সদস্য চাইলে অর্ধবছর (৬ মাস) পর ডিপোজিট এক হাজার টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তূর্য শোভন