আলোকিত জীবন গঠনে ‘পিতা-মাতা’র খেদমতের গুরুত্ব

পিতা-মাতার খেদমত করা মানুষের ওপর অতি আবশ্যক

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

আলোকিত জীবন গঠনে ‘পিতা-মাতা’র খেদমতের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ২ নভেম্বর, ২০১৮

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

মহান আল্লাহ মানুষকে পিতা-মাতার মাধ্যমেই এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। এই পৃথিবীতে পিতা-মাতাই হচ্ছেন সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পিতা-মাতা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানকে বড় করে তোলেন। মহান আল্লাহ পিতা-মাতার খেদমত করার সর্বাধিক তাগিদ দিয়ে তার ইবাদতের পরেই মানুষকে পিতা-মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর ইবাদত করা ফরজ, পিতা-মাতার খেদমত করা মানুষের ওপর অতি আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘এবং আপনার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাঁদের কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তা হলে তাঁদের সঙ্গে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমকও দিয়ো না। তাদের সঙ্গে শিষ্টতাপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে বিনম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা! তাঁদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেমনটি তাঁরা আমাদের শৈশবকালে করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩- ২৪) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে কুরতুবিতে লেখা হয়েছে- আল্লাহপাক এই আয়াতের মধ্যে পিতা-মাতার প্রতি আদব, সম্মান এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করাকে নিজের ইবাদতের সঙ্গে একত্র করে ফরজ করেছেন। যেমন সুরা লোকমানের মধ্যে মহান আল্লাহ নিজের শুকরিয়া আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করাকেও বান্দার ওপর একত্র করে অপরিহার্য করেছেন। এখানে পিতা-মাতার বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের ‘উহ’ বলবে না। এখানে ‘উহ’ শব্দটি বলতে বোঝানো হয়েছে যা দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ পায়। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, পীড়াদানের ক্ষেত্রে ‘উহ’ বলার চাইতে কম কোনো স্তর থাকলে তাও অবশ্যই উল্লেখ করা হতো। পিতা-মাতার সঙ্গে ধমক দিয়ে কথা বলা নিষেধ। তাদের সঙ্গে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার সঙ্গে নরম স্বরে কথা বলতে হবে। তাদের সামনে নিজেকে সবসময় অক্ষম ও হেয় করে পেশ করবে। পৃথিবীর এমন কোনো ধর্ম নেই, যাতে পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার কথা রয়েছে। অতএব, বান্দার জন্য আল্লাহ আনুগত্যের পর পিতা মাতার আনুগত্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ওয়াজিব (তাফসিরে কুরতুবি)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন। আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই তবে তুমি তাদের কথা মানবে! এবং দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতএব তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে। (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪-১৫)

আল্লাহর পর মানুষের প্রতি সর্বাধিক ইহসান বা অনুগ্রহ থাকে পিতা-মাতার। সাধারণ উপকরণের মধ্যে মানুষের অস্তিত্বের পেছনে পিতা-মাতাই বাহ্যিক কারণ। এ জন্য কোরআনে পিতা-মাতার হক সমূহকে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের সঙ্গে যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে।  মুসনদে আহমদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ’র বিশুদ্ধ সনদসহ হজরত আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রসুল (সা.) বলেন, পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে সেবাযত্নকারী সন্তান পিতা-মাতার দিকে সুনজরে ও ভালোবাসা সহকারে দৃষ্টিপাত করে, তার প্রত্যেক দৃষ্টিপাতের বিনিময়ে সে একটি মকবুল হজের সাওয়াব পায়। সাহাবিরা আরজ করলেন, সে যদি দিনে একশবার এভাবে দৃষ্টিপাত করে? তখন উত্তরে তিনি বলেন, একশবার দৃষ্টিপাত করলে প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে এভাবে সাওয়াব পেতে থাকবে। তার ভান্ডারে কোনো কিছুরই অভাব নেই। এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, হে রসুল (সা.)! আমি আমার মাকে সুদূর ইয়েমেন থেকে নিজের পিঠে বহন করে হজ করিয়েছি, তাকে আমার পিঠে করে কাবা ঘর তাওয়াফ করিয়েছি, সাফা মারওয়া পাহাড়ে সায়ী করেছি। তাকে বহন করে আরাফাতে গিয়েছি। আবার সে অবস্থায় তাকে নিয়ে মুজদালেফায় গিয়েছি এবং মিনায় গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করিয়েছি। আমার মা খুব বৃদ্ধা এবং একেবারে চলৎশক্তিহীন। এজন্যে তাকে আমার পিঠে করে এসব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিয়েছি। তার হক কি আমি আদায় করতে পেরেছি? হুজুর (সা.) উত্তর করলেন, না! তার হক আদায় হয়নি। সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কেন? নবী (সা.) বললেন, কারণ তোমার মা তোমার শৈশবকালে সব রকম দুঃখ-কষ্ট তোমার জন্য সহ্য করেছেন এই আশা নিয়ে যে, তুমি ভালোভাবে বেঁচে থাক এবং তোমার যেন কোনো অসুবিধা না হয়। আর তুমি তোমার মায়ের জন্য যা করেছ তা এই আশায় যে, তিনি তো মারা যাবেন, সুতরাং তার জন্য কিছু করি।

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads