এক সময় রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর আলু রপ্তানি হতো। কিন্তু ব্রাউন রোড ডিজিস নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ায় রাশিয়া আলু নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে সেই সমস্যা দূর করে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত আলু উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে রাশিয়া এখন বাংলাদেশের আলু নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। দেশটিতে প্রতিবছর এক লাখ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি সম্ভব। জানা গেছে, আলু রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট উইংগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও বাংলাদেশি আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, কৃষি বিভাগ এখন ব্যাকটেরিয়ামুক্ত আলু উৎপাদনের বিষয়টি রাশিয়াকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে এক লাখ মেট্রিক টন আলু রপ্তানির কথা ভাবছে সরকার। বিশ্বের কোন কোন দেশে বাংলাদেশি আলুর চাহিদা রয়েছে, তা জানাতে সব দেশের মিশনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর আলুর চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিক টন বা তার কমবেশি। গত বছর দেশে এক কোটি ১৩ লাখ টান আলু উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ততর। এই মুহূর্তে দেশের কমবেশি ৩৮০টি কোল্ড স্টোরেজে মজুতকৃত আলুর পরিমাণ ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আলু রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে আলু রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। বেশি রপ্তানি হয়েছে মালয়েশিয়ায়। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, ব্রুনাই, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলু রপ্তানিতে সরকার কয়েক বছর ধরে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০১৬ সালে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এখন আবার নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে এ বছরও দেশে এক কোটি মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন হবে। এমন অবস্থায় কোল্ড স্টোরেজগুলোও মজুতকৃত আলু বাইরে আনতে পারছে না লোকসানের ভয়ে। জানা গেছে, পাওনা পরিশোধের ভয়ে কৃষকরাও কোল্ড স্টোরেজের কাছে যাচ্ছে না। কারণ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদনসহ কোল্ড স্টোরেজে রাখার খরচ ১৪-১৫ টাকা। নতুন আলু মাঠ থেকে উঠার আগেই কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা কৃষকদের তাগাদা দেন আলু নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিবছর প্রচুর আলু নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন অবস্থায় দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত আলু যেন রপ্তানি করা যায়, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতীতে এ ধরনের উদ্যোগ বার বার নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে, এবার সরকার চায়, আলু চাষে কৃষকরা যেন আগ্রহ না হারায় ও ব্যবসায়ীরা যেন লোকসানে না পড়েন।