জাতীয়

আরও কঠোর হচ্ছে সরকার

  • ''
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মো. বাবুল আক্তার:

গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীকে জনগণের সুবিধায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কঠোর হবে সরকার।

এরই মধ্যে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলোর শীর্ষ পদগুলোয় রদবদল করা হয়েছে, এখনো তা অব্যাহত। এরপরও গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক হামলা, মাজার ভাঙা কিংবা বিভিন্ন সংঘাতেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে গোপালগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা মারা গেছেন। একই রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশকে চোরাগোপ্তা হামলা করে আহত করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আঘাত লাগে। দেখা দেয় নৈরাজ্য। বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘাত, লুটপাট চলে। প্রধান সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানানো হলেও কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। ব্যক্তি বা দলগত শত্রুতায় হামলা চালানো হয়েছে। ডাকাতদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লুটপাট হয়েছে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গত এক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন কোন্দলে আহত কিংবা ছিনতাইকারীদের হাতে আহতের সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানাচ্ছে। হঠাৎ করে রাজনৈতিক হামলা সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এমনকি বিএনপি নিজেদের মধ্যেও কোথাও কোথাও কোন্দল ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নিয়মিত এসব ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে খুব একটা সরব ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না কেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের। আর কেন বা কি কারণে এ ধরনের হামলা বাড়ছে সেটি নিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না সরকারের পক্ষ থেকেও।

এদিকে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি। তবে সরকার শিগগিরই ইতিবাচক পর্যায়ে নিতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, পুলিশ আত্মবিশ^াস হারিয়েছে। পুলিশ সংস্কার হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুসারে কাজ করলে তারা আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে পারবে। এ ছাড়া প্রশাসনে অনেকে অসহযোগিতা করছেন। প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দ্রুতই স্থবিরতা কেটে যাবে। তবে সেক্রেটারিয়েট ক্যুয়ের আপাতত শঙ্কা নেই।

অন্যদিকে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এবং জুড়ি বোর্ডের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, কবি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, যারা ফ্যাসিবাদে জড়িত ছিলেন কিংবা গণহত্যায় উসকানি দিয়েছেন তাদের ‘অবশ্যই’ বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, মামলাগুলো সরকার করছে না, জনগণের জায়গা থেকে করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জায়গা থেকেও করা হচ্ছে। সে জায়গা থেকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি এবং আশ^স্ত করেছি, এই মামলাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করা হবে। তদন্ত করা হবে। অভিযোগ না থাকলে মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হবে। যদি কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয় থাকে, তথ্য মন্ত্রণালয়ে তার বিষয়ে বিস্তারিত পাঠাবেন। আমরা দেখব, যোগ করেন তিনি।

সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, জননিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয়, আমরা যেহেতু একটি জরুরি পরিস্থিতিতে আছি, দেশ পুনর্গঠন করা লাগছে, সেহেতু সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণ রিফর্ম (সংস্কার) করে আরও শক্তিশালী ও আস্থার জায়গায় নিয়ে এসে তাদের মাঠে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সেনাবাহিনী অনেকদিন মাঠে আছে। তাদের তো একটা ক্ষমতার মধ্যে কাজ করতে হবে। সেনাবাহিনীকে জনগণের সুবিধায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই সুবিধা জনগণ ভোগ করবে। তা ছাড়া জনগণের সুবিধার্থে এবং অন্যান্য বাহিনীর স্বল্পতা পূরণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আরও আগেই এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। আর সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ায় জনসাধারণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার যেন না হয় সে দিকে সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানান এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

অপরাধ বিশ্লেষক ও পুলিশের সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, গত দেড় দশকে পুলিশকে এতটা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে, পুলিশের সঠিক দায়িত্ব কী সেটা অনেক পুলিশই ভুলে গেছে। যে কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাত সহিংসতা চাইলেও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যেখানে আইন না মানার চেষ্টা হচ্ছে, সেখানে এর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে পুলিশকে। না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads