আপনিও হতে পারেন ট্যুরিস্ট গাইড

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত আসছে অসংখ্য ট্যুরিস্ট

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

আপনিও হতে পারেন ট্যুরিস্ট গাইড

  • ইশতিয়াক আবীর
  • প্রকাশিত ১ অক্টোবর, ২০১৮

পেশা হিসেবে ট্যুরিস্ট গাইড উন্নত বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পেশাটির ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশেও। অদূর ভবিষ্যতে এই ট্যুরিস্ট গাইড পেশাটিই যে চাহিদা তালিকার শীর্ষে অবস্থান করবে, তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে ট্যুরিস্টদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রাকৃতির সৌন্দর্য ট্যুরিস্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত আসছে অসংখ্য ট্যুরিস্ট। এসব ট্যুরিস্টের ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় একজন গাইডের। যিনি ট্যুরিস্টদের ভ্রমণ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। যারা ভ্রমণপিপাসু কিংবা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, তারা এই পেশায় আসতে পারেন। আমাদের দেশে ট্যুরিস্ট গাইডদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনিও সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ট্যুরিস্ট গাইড পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এবং ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ভালো আয় করতে পারেন।

কী যোগ্যতা লাগবে

যারা খুব সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন, পথঘাট সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি হঠাৎ আসা যেকোনো সমস্যা খুব ভালোভাবেই সমাধান করতে পারবেন বলে মনে করেন, তারা এই পেশায় আসতে পারেন। এখানে নিজের আর্থিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার পথও খুঁজে পাবেন। এতে সুযোগ আছে বিদেশেও ক্যারিয়ার গড়ার। এখন বহু দেশেই পর্যটন ব্যবসা সুবিশাল আকার ধারণ করেছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা জানতে হবে আপনাকে। জানতে হবে সে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কেও। ইউরোপ তো বটেই, আমাদের এশিয়া মহাদেশের ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, নেপাল পর্যটন ব্যবসায় অনেক দূর এগিয়েছে। যেকোনো একটি দেশের ভাষা খুব ভালোভাবে জেনে নিলেই ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে আপনি আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এই পেশায় আপনাকে সাহসী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ, আপনি যদি পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে আকস্মিক কোনো কিছু দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েন, তাহলে পর্যটকরা আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহসী হতে হবে। সেই সঙ্গে ধৈর্যশীলও হতে হবে। এ ছাড়াও ট্যুরিস্ট গাইডদের অবশ্যই বিনয়ী এবং স্মার্ট হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বিভিন্ন লোক বা পর্যটকরা আমাদের দেশে আসেন। তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাদের সঙ্গে হাসিমুখে ও আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থিত জ্ঞানের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

পার্টটাইম কাজের সুযোগ

দেশ এবং দেশের বাইরে একজন ট্যুরিস্ট গাইড পার্টটাইম এবং ফুলটাইম দুইভাবেই কাজ করার সুযোগ পাবেন। ইউরোপে বাংলাদেশের অল্প কিছু ছেলেমেয়েসহ পৃথিবীর বহুসংখ্যক তরুণই পার্টটাইম এই পেশায় কাজের মাধ্যমে তাদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করছে। ফুলটাইম কাজে যা আয় হবে তা দিয়ে খুব ভালোভাবেই সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। পেশাটিতে কাজের মধ্য দিয়ে নিজের দেশকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার একটা ব্যাপারও আছে, তাই এ পেশায় দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণীদেরই আসা উচিত। সম্মানজনক আয় তো আছেই, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য তুলে ধরার সুযোগ থাকবে বিশ্ব দরবারে।

যোগ্যতা

এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হবে। পাশাপাশি ভিনদেশিদের ভাষা বোঝার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। তবে কোনো কোনো ট্যুর এজেন্সির সন্মান বা তার চেয়েও বেশি থাকে। যাদের বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা ছাড়াও ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, জাপানিজ, চাইনিজ ইত্যাদি ভাষা জানা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই পেশায় কাজ পেতে বেশি সুবিধা হয়। আর যারা নতুন, তাদের ক্ষেত্রে অন্য রকম একটি অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকে। তবে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে গাইডকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে এবং কোথায়, কীভাবে যাতায়াত করবে, নানা বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।

বেতন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া

ট্যুরিস্ট গাইডের পেশায় প্রতিষ্ঠান ভেদে এবং কর্মের ওপর বেতন কম-বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি ফুলটাইম কাজ করতে চান, তাহলে প্রতিমাসে ১০ থেকে ২৫ হাজার বা তার বেশি বেতনও পেতে পারেন। আবার পার্টটাইম বা চুক্তিভিত্তিক গাইডদের বেতন দৈনিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আবার ট্যুরিস্ট গাইডদের আয়ের আরেকটি মাধ্যম হলো টিপস-বখশিশ। পর্যটকরা গাইডদের কাজে খুশি হয়ে তাদের বখশিশ দিয়ে থাকে। এর ফলে কোনো কোনো সময় গাইডরা মাসিক আয়ের থেকে বেশি বখশিশ পেয়ে থাকে।

ট্যুরিস্ট গাইড নিয়োগের জন্য বাংলাদেশের প্রায় সব সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেটে চাকরির ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও আপনার পরিচিত মাধ্যম থেকে নিয়োগ পেতে পারেন। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগে লিখিত পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা, কথা বলার ধরন, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান এবং উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই করে থাকে।

ট্রেনিং ও যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন

ট্যুরিস্ট গাইড নিয়োগের পর প্রায় সব ট্যুরিজম কোম্পানি এক থেকে তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনসহ বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন, বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ট্যুরিজমের ওপর কোর্স করানো হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads