উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশন কর্মসূচির অষ্টম দিন আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের এই শপথ নেন।
শিক্ষার্থীদের একটি দল গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সমবেত হয়ে অনশনকারীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। তবে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ১৪৭ ঘণ্টা পার হয়েছে। ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত না আসায় অনশনকারীরা তাদের অনশন ভাঙতে পারেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাসার রাজ। তবে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে শপথ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ক্যানটিন-ক্যাফেটরিয়া আগে থেকেই বন্ধ। এবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের খাবার ও টং দোকান।
গতকাল সকাল থেকে এগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসে এখন পানিও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলন দমাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দোকানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে কেন দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে তা তাদের জানা নেই।
বর্তমানে অনশনরত ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ১৯ জন সিলেটের ৩টি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৯ জন অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে পারিবারিক কারণে একজন বাড়িতে চলে যান। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটকের পর সিলেটে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গতকাল বিকোল ৫টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল তাদের সিলেটে নিয়ে আসে।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, আটক ৫ জনকে জালালাবাদ থানায় রাখা হয়েছে।
শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দিচ্ছেন তারা- এমন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
নিশারুল আরিফ আরো বলেন, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ওই পাঁচজনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই পাঁচজনের বাড়ি সিলেটে না। আটককৃতরা হলেন- হাবিবুর রহমান স্বপন, রেজা নূর মঈন দীপ, নাজমুস সাকিব দ্বীপ, এ কে এম মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ।
এদিকে নিজ বাসভবনে অবরুদ্ধ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য এবার খাবার নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আপত্তির কারণে উপাচার্য ভবনে তারাও প্রবেশ করতে পারেননি।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাশ, সাধারণ সম্পাদক মহিবুল আলমের নেতৃত্ব গতকাল দুপুরে শিক্ষক নেতারা খাবার নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলা উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এবার মুখ খুললেন সচেতন সিলেটবাসী। চলমান সংকট অবিলম্বে নিরসন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন সচেতন সিলেটবাসীর নেতৃবৃন্দ।
সংকট নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে তা নতুন প্রজন্মের জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সুচনা করবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তারা।
এক বিবৃতিতে সচেতন সিলেটবাসীর সভাপতি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলার রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এর সঙ্গে সিলেটবাসীর ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সংকটের সৃষ্টি হয়ে সেটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকমণ্ডলি ও গোটা সিলেটবাসী চরম উদ্বিগ্ন। একদিকে ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন ও অনশন অপরদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীরবতায় চলমান সংকট ক্রমশই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। আন্দোলনের শুরুতে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অভিভাবক সুলভ আচরণ সিলেটবাসীর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতি তার এমন আচরণে আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য। একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ শালীনতা নির্ভর আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকল মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার বৃহত্তর সঙ্গে ন্যায্য দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে করতে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষকদের নিয়ে বাজে ও অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে। যা সিলেটের ঐতিহ্য পরিপন্থি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশালী আচরণ সিলেটবাসী প্রত্যাশা করে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো অমানবিক আচরণের সিদ্ধান্ত সিলেটবাসী সমর্থন করে না।
অবিলম্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধান নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানান তারা।