আদালতে অন্তর্বাস প্রদর্শনের জেরে আয়ারল্যান্ডে ব্যাপক বিক্ষোভ

পার্লামেন্টে আন্ডারওয়্যার তুলে ধরে প্রতিবাদ জানানো হয় এভাবে

ছবি : ইন্টারনেট

বিদেশ

আদালতে অন্তর্বাস প্রদর্শনের জেরে আয়ারল্যান্ডে ব্যাপক বিক্ষোভ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর, ২০১৮

১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার এক সপ্তাহ পর আয়ারল্যান্ডে এ সংক্রান্ত বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিচার চলাকালে আদালতে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী বিচারকদের বলেন, ‘তার পোশাক কেমন ছিল সেটি আপনাদের দেখতে হবে। সে একটি থং (এক ধরনের আন্ডার গার্মেন্টস) পরা ছিল যার সামনের দিকে ছিল লেস লাগানো’। ২৭ বছর-বয়সী অভিযুক্ত ব্যক্তিটি এরপর ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হননি। এই বিতর্কের জেরে একজন আইরিশ সংসদ সদস্য একটি লেসের তৈরি থং পার্লামেন্টে তুলে ধরেন এবং এর মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনায় ‘নিয়মিতভাবে ভুক্তভোগীকে দোষারোপের’ ঘটনাকে সামনে তুলে ধরেন। রুথ কোপিংগার আইরিশ পার্লামেন্টে নীল লেস লাগানো অন্তর্বাসটি তুলে ধরেন মঙ্গলবার। তিনি বলেন, ‘এখানে এভাবে এই থং প্রদর্শনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিব্রতকর। কিন্তু যখন একজন ধর্ষণের শিকার মানুষ বা একজন নারীর অন্তর্বাস আদালতে প্রদর্শন করা হয় সেই অন্যায্য ঘটনার ক্ষেত্রে তার কেমন অনুভূতি হয় বলে আপনারা মনে করেন’।

বিচারে কী ঘটেছে?

যে মামলায় অভিযুক্ত লোকটিকে ধর্ষণের ঘটনা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে, তা আইরিশ পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেন যে, তার এবং মেয়েটির মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল সেটি ঘটেছিল দুজনের সম্মতিতেই। তার সিনিয়র পরামর্শক এলিজাবেথ ও'কনেল আদালতে তুলে ধরেন, যা ব্যাপকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং অনলাইনে সিরিজ ধারাবাহিক বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘এই প্রমাণাদি কি এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে যে মেয়েটি আসামিকে আকৃষ্ট করেছিল এবং কারো সাথে সাক্ষাত করার জন্য এবং কারো সাথে থাকার জন্য ? আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে যে সে কোন ধরনের কাপড় পরতো। সে এমন একটি থং পরেছিল যেটির সামনের দিকে লেস লাগানো।’

বিক্ষোভের শুরু যেভাবে

আদালতের রায়ের ওপর প্রকাশনাটি প্রকাশের পরপরই ব্যারিস্টারের যুক্তি-তর্ক সমালোচনা করেন ডাবলিনের রেপ ক্রাইসিস সেন্টারের প্রধান । যদিও তিনি রায় নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তিনি আইনি ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি তুলেছেন। অব্যাহত মিডিয়া নজরদারির মধ্যে আইরিশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা আদালতে এ ধরনের বক্তব্যে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে। আদালতে এ ধরনের কৌশল উপস্থাপনের প্রতিবাদে আইরিশ নারীরা 'হ্যাশট্যাগ দিস ইজ নট কনসেন্ট' দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তাদের আন্ডার গার্মেন্টস এর আকৃতি, রং এবং ম্যাটেরিয়াল এর ছবি তুলে পোস্ট করতে থাকেন।। অনেকেই অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন যেসব দেশের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং ধর্ষণের বিচারে কী ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিচারকরা তাদের অপরাধ বিবেচনায় নিতে পারেন। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় পার্লামেন্টে লেস লাগানো আন্ডারওয়্যার প্রদর্শনের পর মিজ কপিংগার একজন সমর্থককে বলেন, ‘বিচারক এবং কৌসুলিদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে। এই বিচারকে ঘিরে বিতর্ক স্মরণ করিয়ে দেয় দুজন হাই-প্রোফাইল রাগবি খেলোয়াড়ের বিচারকে ঘিরে বিক্ষোভের কথা। তাদেরকে এই বছরের শুরুর দিকে ধর্ষণের ঘটনায় নির্দোষ বলে উত্তর আয়ারল্যান্ডের আদালত। এই ঘটনা সীমান্তের দুইদিকেই ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়’।

বুধবার বিভিন্ন আইরিশ শহরে বিক্ষোভ থেকে যে দাবি তোলা হয়েছে আদালতে ভূক্তভোগীকে দোষারোপের ইতি টানতে হবে। কর্ক- যেখানে এই বিতর্কিত বিচারকাজ চলেছে সেখানে আনুমানিক ২০০ মানুষ জড়ো হয়েছে কোর্ট-ভবনের উদ্দেশ্যে পদযাত্রার জন্য এবং এ‌ যাত্রায় আন্ডারওয়্যার থাকবে। বুধবার পশ্চিমাঞ্চলীয় লিমারিক শহরে বিক্ষোভ হয় এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় ওয়াটারফোর্ড শহরে বিক্ষোভ শুক্রবার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads