মুক্তমত

আথ্রাইটিসের ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা জরুরি

  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর, ২০২১

আনোয়ার হোসেন রাজু

 

গত ১২ অক্টোবর বিশ্ব আথ্রাইটিস দিবস। প্রতি বছর এই দিনটিকে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। মূলত দিবসটি পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আথ্রাইটিস সম্পর্কে জনমনে ধারণা এবং সচেতনতা তৈরি করা। তার জন্য শুরুতেই আমাদের আথ্রাইটিস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।

আথ্রাইটিস নামে পরিচিত এই বাতরোগ মূলত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহ। এটি এক বা একাধিক জয়েন্টকে আক্রান্ত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি প্রবীণদের মধ্যেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি পাঁচজনের একজনই এই রোগে আক্রান্ত। আথ্রাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো অস্টিওআথ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস। আথ্রাইটিস মূলত অনেকগুলো ধরনের সমন্বিত রূপ। প্রায় ২০০ ধরনের আথ্রাইটিস সমস্যার কথা জানা যায়। তবে কিছু সাধারণ ধরন খুব বেশি পরিচিত।

দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি কাজের দরুণ হাড়ের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যে, ব্যথার সৃষ্টি হয়। আর একেই বলা হয় অস্টিওআথ্রাইটিস। মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম অনেক সময় ভুলক্রমে জয়েন্ট সেলকে আক্রমণ করে বসে। ফলে জয়েন্টে প্রদাহ তৈরি হয়, যা রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস নামে পরিচিত। রক্তের মাধ্যমে জীবাণু যখন হাড়ের জয়েন্টে গিয়ে ইনফেকশনের সূচনা ঘটায়, তখন তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়, যেটাকে সেপটিক আথ্রাইটিস বলে। তা ছাড়া জয়েন্টে ইউরিক এসিড জমা হলে অথবা ক্যালসিয়াম পাইরুফসফেট জমা হলে বাত ব্যথা নামে পরিচিত অন্য ধরনের আথ্রাইটিসের সৃষ্টি হয়।

আথ্রাইটিসের সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো সাধারণত হাড়ের জয়েন্টের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত জয়েন্টে অতিমাত্রায় ব্যথা অনুভূত হওয়া; জয়েন্ট ফুলে যাওয়া; হাতের আঙুল, কনুই, কাঁধ, হাঁটু, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ব্যাথা অনুভব করা; শরীরের উভয় পাশে একসঙ্গে ব্যথা অনুভব করা, যেমন—হাতে হলে দুই হাতের জয়েন্টই একসঙ্গে ব্যথা করা ও ফুলে যাওয়া; এবং এর সঙ্গে অনেক সময় শরীর দুর্বল লাগে, জ্বরজ্বর অনুভূতি হয়।

সাধারণত বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তা ছাড়া যেসব কারণ ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, তার মধ্যে পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোনদের আথ্রাইটিসের ইতিহাস থাকলে হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওআথ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস এবং গাউটের মতো সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে সেক্সের পার্থক্য একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন নারীদের রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে গাউটে আক্রান্ত অধিকাংশই পুরুষ।

তা ছাড়া আগে থেকে কোনোভাবে জয়েন্টে আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং অতিরিক্ত স্থূলতা এই ব্যাধির সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে দেয়, যদিও প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তবে কেউ আক্রান্ত হয়ে গেলে কিছু বিষয় সাময়িকভাবে অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারে। ওষুধ ব্যবহারের চেয়ে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের পদ্ধতির দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আরোপ করলে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন প্রাকৃতিক প্রতিকারের ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। নিয়মিতভাবে যথাযথ ব্যায়াম করা, ধূমপান সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা, অ্যালকোহল গ্রহণ না করা।

উপরন্তু ডায়েটে যেসব খাদ্য রাখা যেতে পারে—এমন কোনো নির্দিষ্ট খাদ্য নেই যা বাতের চিকিৎসাতে ব্যবহার করা যাবে। তবে কিছু কিছু  খাবার বাতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে, যেমন—সামুদ্রিক মাছ। বাদাম, ফল এবং শাকসবজি, মটরশুঁটি, জলপাই তেল, আস্ত শস্যদানা ইত্যাদি। যেহেতু অলসতা অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে, সেহেতু সবসময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা। শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা। ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত চেক-আপ করানো এবং অপ্রয়োজনীয় চাপ থেকে জয়েন্টগুলোকে রক্ষা করা। পরিমিত ঘুমানো, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। তা ছাড়া নিয়মিত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবস্থার অনেক উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়।

তবে যাদের এই সমস্যা আছে তাদের কিছু বিশেষ দিকে সতর্ক নজর রাখতে হয়। যেমন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধেকেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্করা আথ্রাইটিসের সঙ্গে উচ্চরক্তচাপের কথা প্রকাশ করে থাকেন। উচ্চরক্তচাপ যেহেতু হূদরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেহেতু দেখা যায় আথ্রাইটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণভাবে হূদরোগের ঝুঁকিও পরিলক্ষিত হয়। ধূমপান দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিধায় আথ্রাইটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা হচ্ছে ধূমপান করা।

আমরা জানি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই আথ্রাইটিসের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ব সচেতনতা অধিক জরুরি। যেমন—নিয়মিত ব্যয়াম করা, সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিহার করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। পাশাপাশি আরো যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, সেগুরো হচ্ছে—শারীরিকভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা এবং জয়েন্টে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ না দেওয়া।

অন্যদিকে সামান্য ব্যথা হলেই ব্যথার ওষুধের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আমাদের কিডনি, লিভার বিকল থেকে শুরু করে অনেক জটিল সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যত্রতত্র ওসুধ ব্যবহার না করে লক্ষণ প্রকাশিত হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। পাশাপাশি মানুষের মাঝে আথ্রাইটিস সম্পর্কে সচেতনার নিমিত্তে বিশদ আকারে প্রচারণা চালানো আবশ্যক। জীবনধারন পদ্ধতি, খাদ্যভ্যাস সম্পর্কে জনমতে স্বচ্ছ ধারণা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাধিটি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads