আজ নামছে সশস্ত্র বাহিনী

ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচন

আজ নামছে সশস্ত্র বাহিনী

জরুরি পরিস্থিতিতে ‘সামরিক শক্তি’ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ গ্রেফতারের ক্ষমতা দিয়ে আজ সোমবার সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। দেশের ৩০০ সংসদীয় এলাকায়ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারঅনুযায়ী সেনা, নৌ বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। ২৪ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন মাঠে থাকবেন তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী থাকবে।

নির্বাচনে যেভাবে কাজ করবে : সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারঅনুযায়ী কাজ করবেন। মূলত তারা জেলা, উপজেলা মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে অবস্থান এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল দেবেন অন্যান্য অভিযান চালাবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা, থানায় বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তাসহ পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী

পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী। অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে বাহিনীকে ডাকা হলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট তাদের সামরিক শক্তি প্রয়োগ গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত নির্দেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।

উপকূলীয় এলাকায় নৌবাহিনীর দায়িত্ব পালন বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কম-বেশি করা যাবে। প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবে।

ইভিএম পরিচালনায় থাকছে সাড়ে হাজার সেনা : আসন্ন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্যবহূত হতে যাওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনার জন্য হাজার ৩০০ সেনা সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তার জন্য থাকবেন মোট হাজার ৫৩৫ জন সেনা সদস্য। আর প্রতি কেন্দ্রের জন্য গঠিত একেকটি টিমে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর তিনজন করে সদস্য। এদের মধ্যে একজন কর্পোরাল, দুজন ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক থাকবেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ কারিগরি টিম। এই টিমে থাকবেন মোট ৫০৭ জন। প্রতি পাঁচ কেন্দ্রের জন্য গঠিত প্রতি টিমে থাকবেন তিনজন করে সেনা সদস্য। এদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, দুজন কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সৈনিক থাকবেন।

ভ্রাম্যমাণ টিমের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ তদারকি টিম। প্রতি ১৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি টিম থাকবে। এক্ষেত্রে মোট ১৬৯ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন একজন জেসিও, দুজন সার্জেন্ট অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সমমর্যাদার সদস্য। এদের ওপরে কাজ করবে প্রতি ৫০ কেন্দ্রের জন্য গঠিত একটি করে মোট ১৭টি টিম। আর প্রতি টিমে তিনজন করে মোট ৫১ জন সেনা সদস্য কাজ করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন অথবা লেফটেন্যান্ট, একজন জেসিও এবং কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যাদার সদস্য। এই টিম সহকারী রিটার্নিং অফিসার বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। আর সবগুলো টিমের কাজ তত্ত্বাবধান করবে উচ্চ পর্যায়ের আরেক টিম।

ইভিএম পরিচালনা করা হবে দুটি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে। যার একটি থাকবে নির্বাচন কমিশনে, অন্যটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে। সেনা সদস্যরা কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কন্ট্রোল রুমের অধীনে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুম কাজ করবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অধীনে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন তার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি টিমের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বিষয়ে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে বাহিনীর পোশাকে থাকলেও তারা কোনো ধরনের অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবেন না। তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল স্থানীয় ক্যাম্প-সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন সেল থাকবে। সেলের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় সেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads