আজানের সুর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধ্বনি

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

আজানের সুর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধ্বনি

  • প্রকাশিত ৭ এপ্রিল, ২০২১

তোফায়েল আহমেদ রামীম

ইসলাম হলো আল্লাহতায়ালার মনোনীত এক সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের নাম। সেই ধর্ম মানুষকে সর্বদা কল্যাণের পথে আহ্বান করে। মসজিদের মিনার থেকে দৈনিক পাঁচবার সুললিত কণ্ঠে ভেসে আসে আজানের সুমধুর বাণী। মনোমুগ্ধকর সেই বাণী মানুষকে নিয়ে যায় সফলতার দিকে, আহ্বান করে মহান সত্তার সাক্ষাৎ লাভে, ধনী-গরিব, সাদা-কালো, উঁচু-নীচু, কৃষক-শ্রমিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধে-কাঁধ  মিলিয়ে সিজদায় অবনত হয় মহান প্রতিপালকের কুদরতি চরণে। সেই সিজদায় জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, মুমিনরা হারিয়ে যায় চির-চেনা ত্রিদশালয়ে, পদচারণ করে শান্তির কাননে। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজানের সুর এতটাই মধুর যে, মুসলমানের সঙ্গে সঙ্গে অমুসলিমদের হূদয়কেও স্পর্শ করে, আকৃষ্ট করে তুলে সকল ধর্মের সকল পেশাজীবী মানুষদের। এই সুর-শব্দ এতটাই  মোহনীয় যে মনকে ছুঁয়ে যায়, এই মধুর কলতান একবার শুনলে  বার বার শুনতে মন চায়। পৃথিবীর সবখানে এই আজান প্রতিদিন ধ্বনিত হয়। সঙ্গত কারণেই মুসলিম সমাজে শান্তি, সমপ্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজানের গুরুত্ব ও অবদান অনস্বীকার্য।

আজান শব্দটি আরবী। এর অর্থ হলো : ঘোষণা দেওয়া, জানিয়ে দেওয়া, আহ্বান করা, ডাকা ইত্যাদি। শরীয়ত নির্ধারিত কতকগুলো বাক্যের মাধ্যমে নামাজের জন্য মানুষকে আহ্বান করাকে আজান বলে। আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বা প্রতীক। আজানের মাধ্যমে প্রতিটি মুমিনের অন্তরে এক ঈমানী শক্তি উজ্জ্বীবিত।

আজান প্রবর্তনের ইতিহাস : প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করে মসজিদে নববী নির্মাণের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন, তখন মুসলমানরা জামায়াতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন। কিন্তু এর জন্য মানুষদের একত্রিত করার মতো কোনো বিশেষ সংকেত বা চিহ্ন ছিল না। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে মজলিশে শূরা বা পরার্মশ সভায় বসলেন। এ অধিবেশনে চারটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। তা হলো ঝাণ্ডা উড়ানো, আগুন লাগানো, শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া ও ঢোল বাজানো। কিন্তু প্রস্তাবসমূহের কোনোটিই গৃহীত হয়নি। কেননা, কাজকর্মের ব্যস্ততার কারণে অনেকে ঝাণ্ডা দেখতে পারবে না। দ্বিতীয়টি আগুন প্রোজ্জ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা ফুঁ দেওয়া খ্রিস্টানদের কাজ। আর চতুর্থ প্রস্তাব ঢোল বাজানো হলো ইহুদিদের কাজ, পরামর্শ সভা সেদিনের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হলো।

ওই রাতেই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখলেন, এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছে আর তিনি জিজ্ঞাস করলেন শিঙ্গা বিক্রি করবে কিনা? ওই ব্যক্তি প্রশ্ন করল আপনি শিঙ্গা দিয়ে কি করবেন? উত্তরে জায়েদ (রা.) বললেন, আমি শিঙ্গা বাজিয়ে মানুষকে নামাজের দিকে আহ্বান করবো। সে বলল, এর চেয়ে ভালো জিনিসের কথা বলে দেব কি? এ কথা বলে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদকে আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দিলেন। পরের দিন স্বপ্নের বিবরণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে পেশ করলে তিনি বলেন, নিশ্চয় এটি একটি সত্য স্বপ্ন। অতএব বেলাল (রা.)কে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও। অতঃপর বেলাল (রা.)-এর কণ্ঠে জোহরের আজান ধ্বনিত হলে, হজরত ওমর (রা.) দৌড়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে যিনি সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার কসম করে বলছি, তাকে যা দেখানো হয়েছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। এভাবেই আজানের প্রবর্তন হলো। (আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৯৯)

মানবজাতির মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল- কোরআনে আজানের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, যখন তোমরা নামাজের জন্য আহ্বান কর (আজান দাও), তখন তারা (কাফের-মুশরিকরা) একে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়া কৌতুক হিসাবে গ্রহণ করে। এর কারণ হচ্ছে,  তারা এমন সমপ্রদায় যাদের বিবেক-বুদ্ধি নেই। (সুরা-মায়েদা, আয়াত-৫৮) আজানের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন নামাজের সময় হয়, আর তোমরা দুজন থাক, তাহলে তোমাদের থেকে একজন আজান ও ইকামত দিবে, এবং দুজনের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে, (বুখারি)। অপর এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)  বর্ণনা করেন,  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু নির্গমন করতে করতে এত দূরে চলে যায় যে, সেখান থেকে আজান শুনা যায় না। (সহিহ বুখারি)।

ইসলামে আজানের গুরুত্ব অনেক। এটি আল্লাহরাব্বুল আলামীনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদানের অনন্য নিদর্শন। আজান ইসলামী সমাজের বড়ত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের বিশেষ দিক। হাদিসে পাকে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও সম্মানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ মর্মে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরাই হবে মানুষদের মধ্য থেকে সবচেয়ে লম্বা ঘাড়ের অধিকারী, অর্থাৎ বহু সওয়াব প্রাপ্ত হবে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৮৭৮) সুতরাং, সুমধুর আজানের ধ্বনিতে সাড়া দিয়ে মসজিদের আঙিনায় অগ্রসর হতে হবে আমাদের। দুনিয়ার জীবনে আখেরাতের সম্বল তৈরি করতে হবে। ক্ষণিকের এই জীবনে আমলে পরিপূর্ণতা পাক এমনটিই প্রত্যাশা সকল মুসলিম উম্মাহর নিকট। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী,  ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads