আগ্রাসীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারীদের হৃদরোগ

নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রয়োজন

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

আগ্রাসীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারীদের হৃদরোগ

  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Dr. lutfor rahman

ডা. লুৎফর রহমান

বাংলাদেশে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, অর্থাৎ হূদযন্ত্রের রক্তনালিতে ব্লকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং এর প্রকোপ মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে অল্প বয়সী রোগী। অনেক সময় রোগী হূদরোগের লক্ষণ বুঝতে না পেরে হঠাৎ মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। অল্প বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার্ট অ্যাটাক আরো বেশি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি প্রাণনাশেরও ঝুঁকি থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের হূদরোগ আগ্রাসীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে সচেতনতার অভাব, শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং খাদ্যাভ্যাস। বাংলাদেশে নারীদের একটা বড় অংশ গৃহিণী, যারা ঘরের কাজের বাইরে কোনো ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করে না বলে অতিস্থূলতায় ভোগে। ফলে পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির মাত্রা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য মেটাবলিক ডিজিজে আক্রান্ত হয়। স্থূলতা ও মেটাবলিক ডিজিজগুলো তাদের হূদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হূদরোগ হতে নিরাপদে থাকতে নারীদের নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। শুধু নিজের জন্যই নয়, পরিবারের সবার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীদেরও স্ত্রীর সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্ত্রীকে নিয়মিত হাঁটতে উৎসাহী করতে হবে, এমনকি দুজন একসঙ্গে হাঁটার অভ্যাস স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সম্পর্কও ভালো রাখবে।

অল্প বয়সে হূদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বংশগত হূদরোগ। সাধারণত বয়স ৪০-এর পরে হূদরোগের ব্যাপারে সচেতন হতে বলা হলেও বংশগত হূদরোগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা থাকে না বলে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন।

LIMA-RIMA Y বাইপাস সার্জারি আধুনিক চিকিৎসা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। হূদযন্ত্র মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হওয়ায় হূদরোগ সবার কাছেই একটি ভীতির কারণ। হূদরোগের মধ্যে রক্তনালির ব্লকজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হূদযন্ত্রের রক্তনালির ব্লকের সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। বর্তমানে হূদযন্ত্রের রক্তনালির ব্লকের নিরাপদ, সফল ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে LIMA-RIMA Y অর্থাৎ বুকের রক্তনালি ব্যবহার করে বাইপাস সার্জারি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এ পদ্ধতিতে হাত বা পায়ের রক্তনালির পরিবর্তে বুকের রক্তনালি ব্যবহার করা হয় বলে সার্জারি পরবর্তী সময়ে রিকভারিও দ্রুত হয়।

৪০ বছর বয়স থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে

বয়স ৪০-এর পর থেকে সাধারণত শারীরিক সুস্থতার অবনতি ঘটতে থাকে। এ বয়সে বিভিন্ন মেটাবলিক ও বংশগত রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি এবং সেই চর্বির কারণে হূদযন্ত্রের রক্তনালিতে ব্লক, ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এই রোগগুলো প্রতিরোধ করতে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই এবং শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে হাঁটা সবচেয়ে উত্তম ব্যায়াম। নিয়মিত হাঁটলে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতা দূর হয়। বাংলাদেশে একটা বড় সংখ্যায় নারী-পুরুষ উভয়ে ব্যাক পেইনে ভোগে। কেননা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজ বাঁকা হয়ে ও দীর্ঘ সময় বসে করতে হয়। এর ফলে আমাদের পেছনের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটলে পেশিগুলো শক্তিশালী হয় এবং ব্যাক পেইন ঠিক হয়ে যায়। বয়স ৪০-এর পরে যেহেতু এ রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, তাই ৪০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা শরীরের জন্য সর্বোত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

লেখক : কার্ডিয়াক সার্জন, ল্যাব-এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads