সারা দেশ

আখাউড়ায় ধান বীজ উৎপাদনে কৃষকের চমক সৃষ্টি

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়। চলতি মৌসুমের বোরো ধান আবাদে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান আবাদে বীজ তলা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি বোরো আবাদকে কেন্দ্র করে তামজিদ খান নামে এক কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগে উন্নত প্রযুক্তিতে কৃষক পর্যায়ে ২৫ টন বীজ উৎপাদন ও বাজারজাত করে চমক সৃষ্টি করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধদপ্তিরের সহযোগিতায় বীজ উৎপাদন করে তিনি এ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তার ধান বীজ ভালো হওয়ায় ইতিমধ্যে কৃষকদরে মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বোরো - আমন বীজ উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করে বছরে আয় করছেন তিনি ৬ লাখ টাকার উপর।

তামজিদ খান উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের জাবেদ খানের ছেলে। ৬ বোন ২ ভাই এর মধ্যে তিনি সবার বড়। তার স্ত্রী,এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।

এদিকে তাঁর উৎপাদিত বীজ ছড়িয়ে পড়েছে আখাউড়া,কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায়। কৃষক পর্যায়ে এই বীজের মাধ্যমে ধান উৎপাদনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে আমন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকসহ সবাই। কেউ ধান শুকাচ্ছেন কেউ বীজ প্রক্রিয়া করছেন।

তামজিদ খান বলেন, এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করলেও ছোট কাল থেকেই কৃষির প্রতি ছিল যথেষ্ঠ আগ্রহ ছিল। প্রথমে তিনি ধান চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজ শুরু করেন। একদিকে ভালো বীজ না থাকা ফলন কম হওয়া ও অন্যদিকে ধানের দর কম থাকায় প্রতি বছর তার লোকসান গুনতে হতো। এরপরও তিনি কৃষিতে হাল ছাড়েননি। স্থানীয় পর্যায়ে ভালো বীজের সংকট দেখে তার মাথায় প্রশ্ন জাগে সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানি যে বীজ বিক্রি করেন কী ভাবে হয় কোথা থেকে আসে। এসব বিষয় জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি ঢাকায় ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটে যায়।

সেখান থেকে জানতে পারনে কীভাবে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়, কিভাবে বীজ উৎপাদনের লাইসন্সে পাওয়া যায়। এরপর নিজের অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের পর্রামশে ২০১৫ সালে শুরু করেন বীজ উৎপাদন ও বিপণন। প্রথম বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো সাড়া পান তিনি। পর্যায়ক্রমে জমি ইজারা নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে উন্নত বীজ উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। ‘বীজ উৎপাদনের পর তা বেচাকেনা করতে দোকান রাখা হয়। স্থানীয় কৃষকরা তাঁর বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন পেতে শুরু করে। এই বীজে ধান ক্ষেত আবাদে ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদা ও বেড়ে যায়। ‘শখে এগ্রো’ কেয়ার কোম্পানি নামে তার এই প্যাকেটজাত বীজের সুনাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে নিজ জেলাসহ আশপাশরে বিভিন্ন এলাকায়।

শুধু ধানের বীজ উৎপাদনই নয়, ধানের ফলন ভালো করতে নানা সময়ে কৃষকদরে পরামর্শ দিয়ে সাধারণ কৃষকরে বন্ধু হয়ে উঠছেন তিনি। নিজের তৈরী করা উৎপাদিত বীজ গত কয়েক বছরে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি ২৮, ২৯,৫৮, ৬৭, ৮৭, ৪৯, উন্নত জাতের ২৫ টন এবং আমনে ১৫ টন মানঘোষিত বীজ বিপণন করেন। তার উৎপাদিত বীজ কৃষকদের কাছে আড়াইকেজি প্যাকেট ১৫০টাকা, ৫ কেজি ৩০০টাকা ও ১০ কেজি ৫৫০টাকায় বিক্রি করা হয়। বোরো-আমনে বীজ বিক্রিতে সব মিলিয়ে খরচ বাদে তাঁর বৎসরে আয় হয় ৬ লাখ টাকার ওপর।

পাশাপাশি তার রয়েছে ধান কাটার ২টি হারভেস্টার মেশিন, ২টি হাল চাষের মেশিন। নিজস্ব জমিসহ বার্ষিক ইজারা নিয়ে প্রায় ৬৫ বিঘা জমিতে বর্তমানে চাষ করছেন। হারভেস্টার ও হাল চাষের মেশিন থেকে আয় হচ্ছে দেড় লাখ টাকার উপর। এসব কাজে ৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি বছর ধান চাষ করে ভালো ফলন না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হতো। লোকমুখে শুনে তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে আমন ধান চাষ করায় প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ মন ধান পাওয়া গেছে বলে জানায়। এরপর বোরো ধান আবাদ করতে তার কাছ থেকে বীজ ধান কেনা হয়। সবচেেয় বড় কথা হলো ফলন ভালো রাখতে তিনি সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরমর্শ দিচ্ছেন।

মো. ফরিদ মিয়া বলেন, সব সময় আমন ও বোরো ধান আবাদ করতে নিজের করা জমি থেকে ধান দিয়ে বীজ করা হত। কোন সময় বাজার থেকে বীজ আনা হতো। ধানে ফলন তেমন ভালো হতো না। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তামজিদের বীজ দিয়ে ধান আবাদ করায় ফলন ভালো হচ্ছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাজেরা বেগম বলেন বর্তমানে তামজিদ খান একজন সফল কৃষকরে পাশাপাশি সফল ব্যবসায়ীও। ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনে এলাকায় চকম সৃষ্টি করেছেন। কৃষক থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার এ নজির সত্যিই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads