ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপন শেষ হয়েছে। বর্তমানে চারদিকে সবুজের সমাহার। যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা জমির পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও এ মৌসুমে জমি আবাদে অতিরিক্ত মূল্যে সেচ পানি দেওয়ায় তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছে ।
স্থানীয় কৃষকরা বাংলাদেশের খবরকে জানায়, বোরো আবাদে জমি তৈরী,বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন,রোপনসহ পরিচর্যায় প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানির জোগান দিতে হচ্ছে ভূগর্বস্থ,খাল,বিল ও নদী থেকে ।
এ উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগই জমিই সেচ পানির উপর নির্ভর হওয়ায় জমি আবাদে সেচের উপর নির্ভর হওয়ায় অতিরিক্ত মূল্যে সেচ পানি কিনতে হয় কৃষকদের। ফলে উপজেলার সর্বত্র চলছে জমিতে পানি বিক্রির এক রমরমা ব্যবসা। সেচ মালিকরা নানা অজু হাতে কৃষকদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, গত বছর এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা ছিল। বর্তমানে প্রতি বিঘা জতিতে দিতে হচ্ছে ১৭’শ টাকা। দফায় দফায় সেচের পানির দাম বৃদ্ধি পেলে ও বাড়েনি ধানের দান। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ মৌসুমে ধান চাষে অনেক লোকসান গুণতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল বীজসহ বিভিন্ন রকমের বীজ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌর শহরের তারাগন,দেবগ্রাম, খরমপুর, দূর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বেরো ক্ষেতে সবুজে সমারোহ হয়ে উঠছে। যে দিকে চোখ যায় শুধু আবাদ কৃত জমি দেখা যায়। এ উপজেলায় বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করা হয়। চারদিকে সবুজের সমাহার। যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ে।
স্থানীয় কৃষকরা বাংলাদেশের খবরকে জানায়, বোরো ধান আবাদ হওয়ার পর থেকে এখন পযর্ন্ত কোন বৃষ্টিপাত নেই। হাল,বিল, নদী নালায় এক প্রকার পানি শুকিয়ে আছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল না হয়ে তার ভূগর্বস্ত পানির উপর নির্ভর হয়ে পড়ছেন।
জমিতে ভাল ধান ফলনের আশায় কৃষকরা ধার দেনা করে পানি কিনে বোরো আবাদ করছে। সেচ পানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে সেচ মালিকরা অতিরিক্ত দামে পানি বিক্রি করে সাধারণ ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমান টাকা। অবশ্য সেচ মালিকরা বলেন ডিজেল, বিদ্যুৎ, সেচযন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির দাম সামান্য বেড়েছে ।
পৌর শহরের তারাগন এরাকার কৃষক মো: আলম খাঁ বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমি তিনি আবাদ করেছেন। জমিগুলো সেচ পানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অতিরিক্ত মূল্যে সেচ দিতে হচ্ছে। জমিতে সেচের পানি থাকায় এখন পযর্ন্ত জমির অবস্থা ভাল রয়েছে। তিনি বলেন, গত মৌসুমে ১ বিঘা জমি আবাদ করতে জমি তৈরী,চারা লাগানো,পানি ,সার, কিটনাশক থেকে শুরু করে ধান কাটা ও মাড়াই পযর্ন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এবার সেচ পানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দাঁড়াবে ৯হাজার টাকা। কিন্তু ধানের দাম না বাড়লে এ মৌসুমে অনেক লোকসান গুনতে হবে জানায়।
উপজেলার মোগড়া ইউপির কৃষক মো: জামাল মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহনশীল থাকলে ও বৃদ্ধি পেয়েছে সেচ পানির মূল্য। জমিগুলো সেচ পানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ধার দেনা করে এ মৌসুমে ৫ বিঘা জমি অতিরিক্ত মূল্যে সেচ দিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ধানের দাম বৃদ্ধি না হলে এ মৌসুমে অনেক লোকসান গুনতে হবে বলে জানায়।
কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। সেচ মালিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় প্রতি বছর বাড়ছে সেচ পানির দাম। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মুল্যে পানি ক্রয় করে জমি আবাদ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন লোকসানের ভয়ে গত বছরের চাইতে এ বছর তার অনেক জমিই অনাবাদি রয়েছে। খরচ কম হওয়ায় ওইসব অনাবাদি জমিতে পাট চাষ করবে বলে জানায়।
সেচ মালিক মো: শহীদ মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আবহাওয়া বিরুপ হওয়ায় একদিন পর পর জমিতে সেচ পানি দিতে হয়। তাছাড়া মেশিন ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। সেই সাথে সেচযন্ত্র চালাতে ও পানি সরবরাহ দিতে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। তাই সেচ পানির দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিঘা প্রতি সেচ পানির মূল্য নির্ধারণ করা হলে ও কৃষকরা তা দিচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, স্থানীয় কৃষকরা পুরোদমে বোরো ধান আবাদ শেষ করেছে। এখন পযর্ন্ত ফসলের অবস্থা খুবই ভালো। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবং সেচ ব্যবস্থা ঠিকমতো হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের ফলন ভাল করতে সার্বিকভাবে স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।