দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনা ও তিস্তা নদীর পানি। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে এ দুই নদীর পাড়ের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকার ফসলের ক্ষেত ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার। ভারি বর্ষণে পাহড়ে ভূমিধসের পাশাপাশি আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার আব্দুল লতিফ জানান, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ১.৪১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। এরই মধ্যে, সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই সকল এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
পানি বৃদ্ধিতে যমুনার চরাঞ্চলের কাঁচা পাট, তিল, সবজি বাগানে বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এ সময় অনেকেই বাধ্য হয়ে অসময়ে পাট-তিলসহ ফসল কেটে নিচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। গত একদিনে ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ১২/১৫ জুলাই পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত ও রাস্তাঘাট। গতকাল লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা ব্রিজ পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচে ও চিলমারী ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে অনবরত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা চললে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নদীপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী খনন না করায় নদ-নদীর বুকে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে উজানের ঢল এলেই পানি উপচে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যায়। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের কৃষক মনসের আলী বলেন, আমাদের গ্রামে ধরলা নদীর তীরবর্তী প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সকাল থেকেই পানি বাড়ছে। গ্রামের ফসলের ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে।
সদর উপজেলার চর পার্বতী এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। চরগুলো তলিয়ে গেছে। এখনই আমাদের নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেক বাড়ির উঠানে এখন হাঁটু পানি। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী খুনিয়াগাছ গ্রামের কৃষক মোস্তাক আলী বলেন, সকাল থেকে আমাদের গ্রামে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। অনেক বাড়িতে এখন হাঁটু পানি। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ভারি বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। হতে পারে আকস্মিক বন্যাও।
ময়মনসিংহে টানা দুই দিনের প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল আর নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে এর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিঘলবাগ, কালিকাবাড়ী গ্রামের মানুষ। বেড়িবাঁধ ভেঙে ভালুকাপাড়া ও রায়পুরের মানুষ এখন পানিবন্দি। হালুয়াঘাট পৌর শহরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া, কড়ইতলী, মহিষলাটি ও তেলিখালী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরকার উদয় রায়হান বলেন, আরো পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত থাকবে। এই সময়ে দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, খোয়াই ও কংস নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। শেরপুর, নেত্রকোণা ও ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।