খেলা মানেই জুয়া- এমন একটা পরিস্থিতির মাঝে অবস্থান আমাদের। চারদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার শত চেষ্টার পরও থামছে না এসব জুয়া খেলা। বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক খেলা, কম-বেশি তা ঘিরে থাকছে জুয়ার আসর। অন্যান্য খেলাকে ঘিরে এ আসর কম দেখা গেলেও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএলকে ঘিরে বেশ ভালোভাবেই জমে উঠেছে জুয়ার আসর। অলিতে-গলিতে, চায়ের দোকান কিংবা ক্লাবঘর প্রায় সব জায়গায় চোখে পড়ে কম-বেশি এ জুয়ার চিত্র। কারো কাছে পরিচিত এটা বাজি হিসেবে, আবার কোথাও একে ব্যবহার করা হয় বেটিং হিসেবে। এই টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ জুয়ার আসর। অনলাইনও বাদ পড়েনি এ আসর থেকে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে এসব জুয়াড়ুর জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে জুয়াড়ুরা সেখানে বেট করে এবং টাকা লেনদেন করে বিভিন্ন ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে। এসব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে বর্তমান যুবসমাজ। শুধু যুবকই নয়, রয়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ মধ্যবয়সী শ্রমিকও। এক কথায় বয়স কিংবা পেশা কোনো বিষয় নয়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে জুয়াড়ুদের লিস্টে। আইপিএল ম্যাচ চলাকালীন খোশ মেজাজে কেউ চা খাচ্ছেন আবার কেউ কেউ দাঁড়িয়ে খেলা দেখছেন। এর সঙ্গে চলছে খেলা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।
প্রতি বছর আইপিএল এবং বিপিএলকে ঘিরে বেশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এই জুয়া খেলা। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও জমে ওঠে এ খেলা। সেই জুয়াও চলে নানাভাবে, নানা স্তরে, নানা স্থানে। দলের হারজিত, পরের বলে কত রান বা ছয়-চার হবে কি-না, পরের ওভারে ব্যাটসম্যান আউট হবেন কি-না, একজন বোলার কত উইকেট পাবেন, ব্যাটসম্যান কত রান করতে পারবেন, দলের কত রান হতে পারে, নির্দিষ্ট দল কত রান বা উইকেটের ব্যবধানে জিতবে ইত্যাদি ছোটখাটো প্রায় সব বিষয় নিয়েই চলছে বাজি ধরা।
জুয়া খেলা থেকে পিছিয়ে নেই গ্রামাঞ্চলের মানুষও। কম-বেশি জুয়া খেলার প্রবণতা সেখানেও দেখা যায়। বিশেষ করে বিপিএল এবং আইপিএলকে ঘিরেই এই প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। যেখানে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকেই। সমাজের শ্রমজীবী মানুষেরা, যারা দিন আনে দিন খায় তারাও এই জুয়ার জালে পড়ে হারাচ্ছেন কষ্ট করে জমানো সামান্য পুঁজি। অনেকেই আবার এই জুয়ার খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পুঁজি জোগাতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং সমাজে নেতিবাচক কার্যক্রম দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্ররা হচ্ছে বিপথগামী। একইসঙ্গে জুয়ার হারজিতকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ক্রিকেট খেলা একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের চিত্তকে করছে আমোদিত, তেমনি বৃহৎ পরিসরে একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কালো টাকা লেনদেনের জুয়াড়ি চক্র। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যা ধ্বংস, পতন ও বিপথগামিতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আগামীর ভবিষ্যৎ যুবসমাজকে রক্ষা করতে এখনই নিতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপ। বিষয়টি সমাজপতিরা ভেবে দেখবেন নিশ্চয়ই।
লেখক : শিক্ষার্থী,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ