আইন শিক্ষা খুবই বিস্তৃত একটি বিষয়। বিশ্বের আধুনিক দেশগুলোতে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য আলাদাভাবে আইনের বিশেষজ্ঞ তৈরি করা হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৭৯ শতাংশ মামলাই ভূমি সংক্রান্ত এবং দেশের ৭০ শতাংশ ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয় ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বছর কয়েক আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভাগ খোলা হয়।
এসব বিভাগে আইন বিভাগের প্রয়োজনীয় কোর্স পড়ানোর পাশাপাশি ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি পড়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন আইনের সকল বিষয়ে দক্ষতা অর্জন হবে, অপরদিকে ভূমিসংক্রান্ত সকল বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা তৈরি হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বা সারা বিশ্বের খুব কম মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা ভূমিসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। একজন আইনজীবী যখন ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ হন, তখন তার কাজের পরিধি অনেক বেড়ে যায় এবং কর্মক্ষেত্রে সম্মানের জায়গা সৃষ্টি হয়।
‘আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে পড়াশোনা করে কী হওয়া যায়? এ প্রশ্নের উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আইন বিভাগে পড়াশোনা করে যা হওয়া যায়, এ বিভাগেও সেসকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তার থেকে বেশি সুযোগ রয়েছে। এই বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষার্থী আইনের সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যেমন-সহকারী জজ, শিক্ষক, ব্যাংকের ল অফিসার, কোম্পানির লিগ্যাল অফিসার, অ্যাডভোকেসিসহ বিসিএস এবং অন্যান্য সব চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এ ছাড়া এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা আইনের সাথে ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে অধিক পড়াশোনা করায় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ভূমি সম্পর্কিত যে-কোনো চাকরিতে তারা এগিয়ে থাকবে।
এ বিভাগের বিশেষত্ব হলো বিভাগটিতে আইনের মৌলিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রতিটি সেমিস্টারে একটি করে ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে পাঠদান করা হয়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা একই সাথে মৌলিক আইন এবং ভূমি আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এ বিষয়টি অধ্যায়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করবেন এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে উঠবেন।
সোহানুর রহমান
বিষয়টি নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার বলেন, দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের সমন্বয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়তনের জনবহুল একটি রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সুপরিকল্পিত ও সময়োপযোগী ভূমি ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ভূমি প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে এ বিষয়ে দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ গ্র্যাজুয়েটের অগ্রাধিকার সুনিশ্চিত করণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।