নতুন বছরে সবজি ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে তেমন কোনো সুখবর নেই। ধাপে ধাপে বেড়েই চলেছে চাল এবং তেলের দাম। বেড়েছে ডালের দামও। শিগগিরই এসব পণ্যের দাম কমারও কোনো লক্ষণ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার মৌলভিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের ভোজ্যতেল শতভাগ আমদানিনির্ভর। আর ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে ৬টি প্রতিষ্ঠান। এদের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই কারো। তারা যা বলে তাই সবাইকে মেনে নিতে হয়।
গোলাম মাওলা বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে তেলের দাম বেশি থাকায় সয়াবিনের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে এসব কোম্পানি। এ কারণে তারা দাম কমালে আমরাও কমাতে পারবো। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে হলে ট্যাক্স তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি লিটার তেলে ৩ স্তরে ১৮ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। ট্যাক্স তুলে দিলে অন্তত লিটার প্রতি ১৮ টাকা কমে আসবে ভোজ্যতেলে।
এদিকে, সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কয়েকদফা মিলার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করলেও তাতে সুফল মেলেনি। বেড়েই চলেছে চালের দাম। চলতি সপ্তাহে আরেক দফায় কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেড়েছে চালের মূল্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় চালের সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। আমদানি হওয়া চাল বাজারে আসলে দাম কমবে।
বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ কম থাকার কারণ হলো, ধানের দাম বেড়ে যাওয়া এবং উৎপাদন কম হওয়া। তবে এসবের পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধির জন্য পথে পথে চালের ট্রাকে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন মিলাররা। এ প্রসঙ্গে, নাহিদ অ্যারোমেটিক অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আহম্মেদ আলী সরদার স্বপন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘কুষ্টিয়ার ট্রাক স্ট্যান্ডে গেলেই প্রতিটি ট্রাক থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। এরপর পথে কয়েক জায়গায় পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় প্রতিটি গাড়িকে। এসব চাঁদাবাজি কমে গেলে চালের দাম কিছুটা কমে আসতো। যার সুফল ক্রেতারা ভোগ করতো।’
চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করে সরকারের মন্ত্রীদের দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয় উল্লেখ করে আহম্মেদ আলী সরদার স্বপন বলেন, ‘আমাদের উল্টো সরকারকে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি গাড়িতে ১ থেকে সোয়া লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, চালের যে বর্তমান দাম এটি উৎপাদন খরচের তুলনায় কোনোভাবেই বেশি না। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল মিল থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে গিয়ে এটি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে আমদানির কোনো বিকল্প নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি অভাবকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, পাইকারি এবং খুচরা বাজারের মধ্যে একটা বিরাট ব্যবধান রয়েছে। ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজ, আদা, রসুনে খুচরা বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত লাভে বিক্রি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের সমপরিমাণ বাড়িয়ে দিগুণ দামে বিক্রি করেন। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব থাকলেও এদিকে তারা নজর দেন না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র দুটি ঈদ এলেই গণমাধ্যমের ভয়ে নড়েচড়ে বসেন তারা। আর এসময় ব্যবসায়ীদের দোষারোপ জেল-জরিমানা করা হয়ে থাকে। এদিকে, চলতি সপ্তাহে বেড়েছে ডালের দামও। এছাড়া, দারুচিনিসহ কয়েকটি মসলার দামও কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গেলো সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ, আলু, ডিম এবং কয়েক প্রকার সবজির দাম। বাজার এখন নতুন পেঁয়াজে ভরপুর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি কমেছে নতুন আলুর দামও। এছাড়া, বাজারে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারছেন। গেল সপ্তাহে সবজির দামে তেমন হেরফের হয়নি। বেশিরভাগ শীতকালীন সবজি ৩০ টাকা কেজি দরের মধ্যে মিলছে। যদিও বাজার এবং মানভেদে দামের হেরফের হচ্ছে।