অসিয়ত শব্দের অর্থ হলো মিশ্রণ করা, কল্যাণ কামনা করা। আর শরিয়তের পারিভাষিক অর্থ মৃত্যুর পরের জন্য নিজের মালিকানা কিছু অংশ বিনিময় ব্যতিরেকে কাউকে দিয়ে দেওয়া (মেশকাত)। শাব্দিক অর্থে যে কোনো কাজ করার নির্দেশ প্রদানকে অসিয়ত বলা হয়। পরিভাষায় ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুর পরে সম্পাদন করার জন্য মৃত্যুকালে যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাকেই অসিয়ত বলা হয় (মায়রিফুল কোরআন)।
ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধানের মতো মরহুমের অসিয়তের গুরুত্ব রয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘যারা তার অসিয়ত শুনে নেওয়ার পর (নিজেদের স্বার্থে) তা পরিবর্তন করে নিল তাদের জানা উচিত, এটা পরিবর্তনের অপরাধের দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে, আল্লাহপাক সবকিছুই শোনেন এবং সবকিছুই তার জানা। অবশ্য কারো যদি অসিয়তকারীর কাছ থেকে আশঙ্কা থাকে যে, কারো প্রতি অবিচার করে গেছে, কিংবা বেইনসাফ করা হয়েছে, তাহলে মূল বিষয়টি সংশোধন করে দেয়, এতে তার কোনো দোষ হবে না; আল্লাহপাক বড়ই ক্ষমাশীল, মেহেরবান।’ (সুরা বাকারা : ১৮১-১৮২)।
মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের যত্নবান হতে হয়। মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনে কোনো প্রকার গড়িমসি প্রকাশ করা যাবে না। এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ পাক (তোমাদের উত্তরাধিকারী) সন্তানদের সম্পর্কে এ মর্মে তোমাদের জন্য বিধান জারি করেছেন যে, এক ছেলের অংশ হবে দুই কন্যা সন্তানের সমান, কিন্তু কন্যারা যদি দুইয়ের বেশি হয় তাহলে তাদের জন্য রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর কন্যা সন্তান যদি একজন হয়, তাহলে তার (অংশ) হবে (পরিত্যক্ত সম্পত্তির) অর্ধেক; মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য থাকবে সে সম্পদের ছয় ভাগের এক ভাগ; অন্যদিকে মৃত ব্যক্তির যদি কোনো সন্তান না থাকে এবং পিতামাতাই যদি হয় তার একমাত্র উত্তরাধিকারী, তাহলে তার মায়ের (অংশ) হবে তিন ভাগের এক ভাগ, যদি মৃত ব্যক্তির কোনো ভাই-বোন বেঁচে থাকে তাহলে তার মায়ের (অংশ) ছয় ভাগের এক ভাগ, মৃত্যুর আগে সে যে অসিয়ত করে গেছে এবং তার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার পরই; তোমরা জানো না তোমাদের পিতামাতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততির মধ্যে কে তোমাদের জন্য উপকারের দিক থেকে বেশি নিকটবর্তী; এ হচ্ছে আল্লাহর বিধান, অবশ্যই আল্লাহপাক সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত।’ (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১১)।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
-